বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / যাদের মনুষ্যত্ব আছে তারা কিভাবে বিএনপির সঙ্গে হাত মেলায়

যাদের মনুষ্যত্ব আছে তারা কিভাবে বিএনপির সঙ্গে হাত মেলায়

নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ’৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর ক্যু-পাল্টা ক্যু, কারাগারে শত শত সামরিক কর্মকর্তা-সৈনিককে প্রহসনের বিচারে হত্যা, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দুঃশাসন এবং নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ভয়াল-বীভৎস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভিডিওচিত্র সংসদে তুলে ধরে প্রশ্ন রেখেছেন- যাদের মধ্যে এতটুকু মনুষ্যত্ব আছে, তারা কিভাবে বিএনপিকে সমর্থন দেয়, তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে? সেটাই আমার প্রশ্ন।

দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি। সেটা থাকলে দেশের এত উন্নয়ন কোনদিনই সম্ভব হতো না। আর যাদের হাতে রক্তের ছাপ, যাদের উত্থানই হয়েছে হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে। জাতির জনকসহ তাঁর পরিবারের সকলকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে যে দলের জন্ম, তাদের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্রের শিকার নিতে হয়।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিডিও ও ছবির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল দুঃশাসনের সামান্য কিছু দেখাতে পেরেছি। এর রকম শত শত ঘটনার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আর এরশাদ সরকারের আমলেও আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অনেক তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে, যা আমরা পরে দেখাব।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে ১৯৭২ সালের ৩০ এপ্রিল মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেকর্ডকৃত ভাষণ প্রচার করা হয়। এরপর স্পীকার অধিবেশন সমাপনীর রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে সংসদ অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ক্যু-পাল্টা ক্যু, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে প্রতিদিন কার্ফু দিয়ে দেশ পরিচালনার কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়।

দীর্ঘ ২১টি বছর মানুষকে অনেক যাতনা ভোগ করতে হয়। এ সময়ে ২১টি ক্যু হয়, আর প্রতিটি ক্যু-এর পর শত শত সামরিক-বেসামরিক মানুষকে প্রহসনের বিচারের নামে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সামরিক স্বৈরাচাররা কিছু এলিট শ্রেণী তৈরি করলেও দেশের মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের অনেকে বলে দেশের নাকি কিছুই উন্নতি হয়নি! ২০০৫-০৬ বিএনপির আমলে বাজেট ছিল মাত্র ৬৪ হাজার টাকা। আজকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেট ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।

দেশের যদি উন্নতি নাই হয় তবে এতবড় বিশাল বাজেট কিভাবে দিতে পারলাম? বিএনপির আমলে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ মার্কিন ডলার। করোনা মহামারী মোকাবেলা করেও এখন আওয়ামী লীগের আমলে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। তবে দেশের উন্নয়ন হয়নি কিভাবে, সেটাই আমার প্রশ্ন।

আমরা সেই দারিদ্র্যসীমা ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের মৌলিক অধিকার একে একে পূরণ করে যাচ্ছি। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।

সরকারপ্রধান এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বিএনপির আমলে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ ভাগ। আমরা দেশের সাক্ষরতার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বৃত্তি-উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি, মায়ের নামে মোবাইলে বৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি, বয়স্ক-বিধবা ভাতার টাকা বৃদ্ধি করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, দেশের উন্নয়নের জন্য কিনা করেছি। দেশের এত উন্নয়নও যদি তাদের (বিএনপি) চোখে না পড়ে, না দেখে তবে আমরা কী করতে পারি?

করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) আরোপের ফলে সারাবিশ্বের বিপর্যস্ত অবস্থা সংসদে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্বেই এখন চরম মন্দা, বিদ্যুতের জন্য হাহাকার।

ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশও রেশনিং করে বিদ্যুত, পানি ও জ্বালানি দিচ্ছে। গোসলের পানি, জামা-কাপড় ধোঁয়ার জন্য বেশি পানি ব্যবহার করা যাবে না। এই যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে সারাবিশ্বেই নিত্যপণ্যে ও জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

আমরা এ ক্ষেত্রে কিছুটা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি। সারাবিশ্বের যা অবস্থা, এর মধ্যে আমরা দেশের অর্থনীতিকে ধরে রাখতে পেরেছি এটাই তো বড় কথা। যেখানে উন্নত দেশগুলোকে রেশনিং অবস্থায় যেতে হয়েছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ রিপোর্ট সংসদে তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টেই উঠে এসেছে- ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে উন্নতির পথে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে অনেক ভর্তুকি কেন দিচ্ছি সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ভর্তুকি যদি না দেই তবে কী অবস্থা হবে সেটি একবার ভেবে দেখেছেন? ইউরিয়া সার ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনে এনে আমরা কৃষককে ২২ টাকা কেজিতে দিচ্ছি। একমাত্র ইউরিয়াতেই কেজি প্রতি ৪৩ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি। প্রত্যেক খাতে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি যাতে কৃষকরা উৎপাদন বাড়াতে পারে। দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেটাই আমার মূল্য লক্ষ্য, সেটাই আমরা নীতি।

বিরোধী দলের ওপর হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পুলিশকে বলেছি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী করলে বাধা বা কিছু না করার জন্য। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষও যদি আক্রান্ত হয়, তবে নিজেকে রক্ষার অধিকার রয়েছে। কর্মসূচীর নামে বোমা, গুলি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করা হলে তখন পুলিশ কী করবে? শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী না করে মাঠে নেমেই আক্রমণ। মিডিয়া কাভারেজের জন্য এটা তারা করে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা-সন্ত্রাস-গণধর্ষণ-লুটপাট এটাই তো ছিল তাদের আমল। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়ে গৌরনদী থেকে ২৫ হাজার সংখ্যালঘু পরিবার আমাদের কোটালিপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। মায়ের সামনে মেয়েকে, ছোট শিশু কাউকেই তো রেহাই দেয়নি। ওই সময় ধর্ষণের মহোৎসবে মেতেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।

নির্বাচনের নামে বিএনপির কমিশন বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে বিএনপির হারুন সাহেব তার নির্বাচনী এলাকায় ভোট ডাকাতির কথা বলেছেন। তবে কী তিনি ভোট ডাকাতি করেই এখানে (সংসদে) এসেছেন। ভোট না হলে উনি জিতলেন কিভাবে? তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি, চালিয়েছে অগ্নিসন্ত্রাস। ২০০৮ সালে তিনশ’ আসনের বিপরীতে বিএনপির সাতশ’ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। গুলশান থেকে ফখরুল দেন একজনকে, পল্টন থেকে রিজভী দেন একজনকে- আবার লন্ডন থেকে সবাইকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনের নামে তারা বাণিজ্য করেছে। কে যত বেশি টাকা দিতে পেরেছে সেই মনোনয়ন পেয়েছে। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপি জিতবে কিভাবে?

সংসদ নেতা বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন নয়, জাদুর বাক্স তো দেখিয়েছে বিএনপি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাকে সৎ দেখাতে ভাঙ্গা স্যুটকেস-ছেঁড়াগেঞ্জি, জিয়াউর রহমানের ছেঁড়া প্যান্ট কেটে কোকোর প্যান্ট তৈরি করার অনেক দৃশ্য দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারপর কী দেখা গেল? খালেদা জিয়ার গায়ে বিদেশী লাখ টাকা দামের শিফন শাড়ি। জাদুর বাক্স থেকে একে একে বেরুতে থাকল কোকো-১, কোকো-২, কোকো-৮ লঞ্চ, ইন্ডাস্ট্রিজ, হাজার হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, জাদুর বাক্স বিএনপির না থাকলে এত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক কিভাবে হলো? লন্ডনে বসে একজন কিভাবে চলে? লন্ডনে আয়ের উৎস দেখায় ক্যাসিনো (জুয়া) থেকে আয়। কিন্তু কি বিলাসী জীবন তার। বাস্তবে কী পরিমাণ টাকা তারা পাচার করেছে এবং এখনও তার কাছে দেশ থেকে কী পরিমাণ টাকা পাচার করে তাকে দেয়া হচ্ছে এটার একটা তদন্ত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

আরও দেখুন

সিংড়ায় আগ্রহ বাড়ছে বস্তায় আদা চাষের

নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়ায় ,,,,,,,,,,,কম খরচে বেশি আয়ের আশায় পতিত জমিতে আদা চাষ শুরু করেছেন নাটোরের …