নিউজ ডেস্ক:
অবৈধ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩ মাস আগে চলা শুদ্ধিকরণ অভিযানে যারা সাড়া দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া গত রবিবার অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল, ব্লাডব্যাংক, ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোকে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে বন্ধ করার জন্য যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে আবারো অভিযানে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গতকাল সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে অবৈধ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধে দ্বিতীয় দফায় এই শুদ্ধিকরণ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। নিবন্ধন না থাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল। রাজধানীর বকশিবাজার, উত্তরা, চকবাজার, লালবাগ, যাত্রাবাত্রী, কচুক্ষেত ও বনানীতে একযোগে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। রাজধানীতে ৮টি সেবা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদেশি চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে চিকিৎসা দিয়ে আসছিল বনানীতে অবস্থিত হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট এন্ড কসমেটিক সার্জারি সেন্টার। কিন্তু সেই চিকিৎসকদের কেউ কখনো দেখেননি। অভিযানে দেখা যায়, সেখানে নেই চিকিৎসার যথাযথ পরিবেশ। ফলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বকশিবাজার মোড়ে লাইসেন্স না থাকায় ‘খিদমাহ লাইফ কেয়ার’ নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এছাড়া সেন্ট্রাল বাসাবো জেনারেল হাসপাতাল, কনক জেনারেল হাসপাতাল মাতুয়াইল, শনিরআখড়ায় সালমান হপসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার, চানখারপুলে ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল, বনানীতে ঢাকা পেইন এন্ড স্পাইন সেন্টার নামের সেবা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। সেখানে বন্ধ করে দেয়া হয় ৭টি অবৈধ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নোয়াখালীতে ৪টি এবং নওগাঁতে ৫টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
গতকাল দুপুরে বনানীতে পরিচালিত অভিযান কার্যক্রম পরিদর্শনে যান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৩ মাস আগে শুদ্ধিকরণ শুরু হয়েছিল। তবে এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ণ করেনি। লাইসেন্সবিহীন যত প্রতিষ্ঠান আছে সব বন্ধ করে দেয়া হবে। অধিদপ্তরের কাছে থাকা অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো তো বটেই এর বাইরেও যদি কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে সেগুলোর খোঁজ পাওয়া গেলে সেগুলোও বন্ধ করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতেই এই কর্মসূচি। আমরা কারো শত্রæ না। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে চিকিৎসাসেবা দিক। কিন্তু সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেবার নামে প্রতারণা সহ্য করা হবে না। আমরা অনেকবার বলেছি- এগুলো করা উচিত না, করবেন না। কিন্তু তারা যেহেতু শোনেননি, এ কারণে আমরা নিজেরাই মাঠে নেমেছি। তাদের বন্ধ করে সিলগালা করে দেয়া হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে দেখা হবে হাসপাতালগুলোর সেবার মান। সেই মান অনুযায়ী সেগুলোকে এ বি ও সি- এই ৩ শ্রেণিতে ভাগ করে তা জনগণকে জানিয়ে দেয়া হবে।
এর আগে রবিবার ডা. আহমেদুল কবির জানিয়েছিলেন, আগে ৭২ ঘণ্টার সময় দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। প্রথম দফায় অভিযান পরিচালনা শেষে এখনো অসংখ্য অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে। সোমবার থেকে আবারো কঠোর অভিযানে নামবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এবার এই অভিযান হবে ৯৬ ঘণ্টার। যেভাবে ৩ মাস আগে অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবারো সেভাবেই হবে। এরপর অভিযানের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আগামী শনিবার বা রবিবার বৈঠক করবেন তারা।
তিনি আরো জানান, গত ২৬ মে সারাদেশে অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মোট ১ হাজার ৬৪১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। অভিযানে সেগুলোকে জরিমানা করে ২৫ কোটি ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৭ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। নতুন লাইসেন্সের জন্য পরিদর্শনের অপেক্ষায় আছে ১ হাজার ৯৪৬টি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্স নবায়ণের জন্য পরিদর্শনের অপেক্ষায় আছে ২ হাজার ৮৮৭টি প্রতিষ্ঠান। ১ হাজার ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠান নতুন লাইসেন্স এবং ২ হাজার ৯৩০টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ণ করেছে। লাইসেন্সের জন্য পরিদর্শন শেষ হয়েছে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্স নবায়ণের জন্য পরিদর্শন শেষ হয়েছে ১ হাজার ৭৬টি এবং নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে অপেক্ষমান আছে ২ হাজার প্রতিষ্ঠান।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫ মে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর সারাদেশে শুরু হয় অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান। এতে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি অবৈধ সেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রথম ১০ দিন সাঁড়াশি অভিযান চললেও পরবর্তীতে এ অভিযানের গতি অনেকটা কমে আসে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, এই অভিযান চলমান একটি প্রক্রিয়া।
আরও দেখুন
সিংড়ায় আগ্রহ বাড়ছে বস্তায় আদা চাষের
নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়ায় ,,,,,,,,,,,কম খরচে বেশি আয়ের আশায় পতিত জমিতে আদা চাষ শুরু করেছেন নাটোরের …