নিউজ ডেস্ক:
সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিতে জেলা প্রশাসনের দরজা খোলা রাখতে বলেছেন হাইকোর্ট। সোমবার আদালত অবমাননার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় তলবে হাজির হলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে সতর্ক করে একথা বলেন আদালত।
পরে আদালত আগামী ২৪ অক্টোবর রুল শুনানির তারিখ রেখে আদেশ দেন। আদেশে জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে রুল শুনানির দিন ওসিসহ বাকিদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) গত দু’দিনের হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
এ আদেশের পর কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককে ডায়াসের সামনে ডেকে নিয়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, আপনাকে আদালতে আসতে হবে না। তবে আপনাকে সতর্ক করছি, সতর্ক করছি, সতর্ক করিছি। সাধারণের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখবেন। দরজা-জানালায় ভাড়ি পর্দা দেওয়া থাকে। দরজা জানালায় কোনো পর্দা থাকবে না। আপনি কি করছেন, মানুষ যেন তা দেখতে পায়। তারা যেন সহজেই আপনার কাছে যেতে পারে। লুঙ্গি পড়েও যেন একজন মানুষ আপনার কাছে যেতে পারে। ভাল কাজ করুন। চুরি ডাকাতি, গুন্ডামি, দখলবাজী আপনার নজরে আসার সাথে সাথে আপনি দেখবেন। অভিযোগ শুনেই আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সমালোচনা করে আদালত বলেন, ডিসি অফিসে সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। দরজা-জানালায় ভাড়ি পর্দা দেওয়া থাকে। আপনারা বিলাশবহুল জীবনন যাপন করেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনাদের তেমন যোগাযোগ থাকে না। একজন জেলা প্রশাসক সরকারের হার্ট। আপনাদের দায়িত্ব অনেক। আপনাদের কাজের উপরে সরকারের ভাবমূর্ত নির্ভর কর। সরকার সব কাজ আপনাদের দিয়েই বাস্তবায়ন করে। জানি আপনারা অনেক কাজ করেন কিন্ত তারপরও সাধারণ মানুষের জন্য আপনাদের দরজা খোলা রাখুন।
ডিসি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, এ মামলায় অভিযোগকারী আপনার কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার কাছ পর্যন্ত যেতে পারেননি। আপনার অফিসের লোকজন অভিযোগ গ্রহণ করেননি। সেদিন যদি আপনি অভিযোগটি শুনতে পেতেন তাহলে হয়তো এত দূর আসতে হত না। এজন্য আপনাদের দরজা, জানালায় কোন পর্দা থাকবে না। আমরা এটা দেখব।
আদালতে ডিসি-এসপির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক ও ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে ছিলেন রাগীব রউফ চৌধুরী।
৮ একর জমিতে গড়ে তোলা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম নামের বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল, ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিল ও বসতভিটা বন্ধক রেখে ২০১৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৪২ কোটি টাকা ঋণ নেন। ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে তিনি ব্যাংকের কাছে ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করেন। ব্যাংক শফিকুল ইসলামের ঋনের পুনঃতফসিল না করে, এমনকি কোনো আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে সম্পত্তি সরাসরি নিলামে তোলে ব্র্যাক ব্যাংক। ১৩৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। নিলাম কেনেন ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদ। গত ২৮ জুলাই ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর গত ৩১ জুলাই নিলাম প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন শফিকুল ইসলাম।
হাইকোর্ট সে রিটের শুনানির পর গত ২ আগস্ট নিলাম পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে ৩১ আগস্টের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ও পরবর্তী এক বছরের মধ্যে ঋণের আরও ৬ কোটিসহ মোট ২৬ কোটি টাকা শফিকুল ইসলামকে পরিশোধ করতে নির্দেশ দেন। আর ৪ আগস্টের মধ্যে শফিকুল ইসলামকে তার সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ৫ আগস্ট ভোরে নিলাম ক্রেতা ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদ সম্পত্তির দখল নেন।
দখেলের এ অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলেও তার অভিযোগ গ্রহন করা হয়নি বলে জানান আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী। কালের কণ্ঠকে বলেন, “হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমার মক্কেল আজ ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। ”