শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / ৯৯ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে চীন

৯৯ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে চীন

নিউজ ডেস্ক:
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি আরও ১ শতাংশ পণ্য চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্য ও সেবা বিনাশুল্কে চীনে প্রবেশাধিকার পাবে। রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নতুন এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

ওইদিন সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ওয়াং ই। পরে তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর। তার জন্য একটা সুসংবাদ। সেটি হচ্ছে ৯৮ শতাংশ আইটেমে (চীন) ডিউটি ফ্রি করেছিল। বাকি যে ২ পারসেন্ট, এটা সব সময় তাই হয় যে কোনো দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, দেখা যায় এটাতে সবচেয়ে বেশি সেনসিটিভিটি ও গুরুত্ব থাকে। উনারা ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও অতিরিক্ত ১ শতাংশে ডিউটি ফ্রি সুবিধা দেবেন।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাড়তি এই ১ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চীনা মন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশের জন্য ‘সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি’। বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যে চীন শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিলেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল।

তিনি আরও বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৮০ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে চীন থেকে আমদানি করেছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ১. পিরোজপুরে অষ্টম

বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ, ২. দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ৩. ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন এবং ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় চীনা বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আনোয়ারায় যে চায়নিজ ইকোনমিক জোন তৈরি হচ্ছে, সেখানে অধিক পরিমাণ চীনা কারখানা, প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে তারা সহায়তা করবেন।’

তিনি আরও বলেন, আনোয়ারায় ওই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রম্নত চালু করার জন্য বাংলাদেশের তরফ থেকে যাতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেজন্য বৈঠকে তাগাদা দিয়েছে চীনা পক্ষ।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি পাঁচ বছর পরে বাংলাদেশে এলেন এবং এর অর্ধেক সময় সারা বিশ্ব কোভিড পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। এরপরও বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন করে যাচ্ছে, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে। এটি দেখে চায়না অত্যন্ত আনন্দিত।’ তিনি বলেন, সারা বিশ্বের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পাশে চায় চীন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন উলেস্নখ করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এফডিআই বাড়ানোর জন্য একসঙ্গে আমরা কাজ করব, এটা বাংলাদেশের তরফ থেকে, শেখ হাসিনা সরকারের তরফ থেকে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। আমাদের বাণিজ্যিক ভারসাম্য কমিয়ে আনা প্রয়োজন, এটা একটা বড় ইসু্য।’

রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতি সমাধানে চীন অব্যাহতভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। মোমেন-ওয়াং ই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইসু্যতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গা ইসু্যতে আমাদের বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। তারা চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো কারণে শুধু বাংলাদেশ না, অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে চীন অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইসু্যটি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে খুব জোরালোভাবে বলেছেন। তিনি বলেছেন, এটাতে চীনের সহযোগিতার প্রয়োজন। এই সমস্যা সমাধানে তারা বলেছে, সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে ঢাকা-কুংমিং ও ঢাকা-গুয়াংঝু রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিয়েছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, সরাসরি এ ফ্লাইট চালু হলে তা দুই দেশের নাগরিকদের সংযোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দু-একদিনের মধ্যে আবার চীন ভিসা দেওয়া শুরু করবে বলেও বৈঠকে চীনের তরফ থেকে জানানো হয়। এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চীনে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ ছিল। মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সেখানে লেখাপড়া করতেন, যারা দেশে ফিরে আটকা পড়ে যান। এ বিষয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে নিয়মিত চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুয়েক দিনের মধ্যে চীনে ফেরত যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদান করা শুরু হবে। এক্ষেত্রে লজিস্টিকস এবং অন্যান্য বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তারা বলেছেন, সোমবার থেকে ভিসা ইসু্য করা শুরু করবেন। একজনের জন্য ইতোমধ্যে ভিসা ও ট্র্যাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে।’

তাইওয়ান ঘিরে উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান বৈঠকে বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এটা তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের যে অবস্থান, ‘এক চীন’ নীতি আমরা যে পুনর্ব্যক্ত করেছি, এটার কারণে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (ওয়াং ই) বলেছেন, কিছু রাষ্ট্র আছে পৃথিবীতে, যারা একটু ভুল বোঝে বা চীনকে মিসইন্টারপ্রেট করে তো, ওই বিষয়ে কথা হয়েছে কিছুটা।’

সেই ‘ভুল বোঝাবুঝির’ বিষয়ে আরও বিশদ জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম উত্তরে বলেন, যেহেতু দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে, এর কতটা তথ্য প্রকাশ করা হবে, চীন তা ঠিক করবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো আমরা মোটামুটি জানি, যে ঘটনাগুলো এখন ঘটছে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে, চীনের নিজস্ব অবস্থান আছে এক চীন নীতি, তাইওয়ান বিলংগস টু চায়না- সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নর্মস ফলো করা, এ বিষয়গুলো তারা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন, আমাদের কনভেনশনের জন্য।’

সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পরপরই তিনি মঙ্গোলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত 

নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম ,,,,,,,,,,বগুড়ার নন্দীগ্রামে রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন হেমন্তকাল। মাঠ …