নিউজ ডেস্ক:
বড় পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষায়। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) আয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষায় আরও শৃঙ্খলা আনতে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। এখন থেকে বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন ক্যাডারের বিভিন্ন শূন্যপদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে। ফরম পূরণের সময় ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন ক্যাডারেও চয়েস দিতে পারবেন প্রার্থীরা। আর আসনবিন্যাস নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের নানা অভিযোগ এড়াতে সব প্রার্থীর দৈবচয়নে হবে সিটপ্ল্যান। প্রতিবছরের ৩০ নভেম্বর নির্দিষ্ট সময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কমিশনের অধীন নানা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে আরও মানসম্মত প্রশ্ন তৈরির স্বার্থে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বিদ্যমান সিলেবাস। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটিও কাজ শুরু করেছে। সবমিলে বিসিএস পরীক্ষায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্যমতে, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পদস্বল্পতায় প্রতিটি বিসিএসে বৃহৎ সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীকে ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে না পিএসসি। তাদের নন ক্যাডার হিসেবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ করে এ সাংবিধানিক সংস্থাটি। কিন্তু নন ক্যাডারের শূন্যপদের তালিকা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না থাকায় সর্বোচ্চ কতজন প্রার্থীকে নন ক্যাডারে নেওয়া যাবে- তা নিয়ে প্রতিবছরই প্রার্থীদের মধ্যে থাকে জল্পনা-কল্পনা। আগামী ৪৫তম বিসিএস থেকে প্রার্থীদের এই অনিশ্চয়তার অবসান হচ্ছে। আগামী ৩০ নভেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে পিএসসি। বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদনের আগেই একজন প্রার্থী নন ক্যাডারে শূন্যপদের সংখ্যাও জানতে পারবেন। ক্যাডার পদে শূন্যপদের পাশাপাশি নন ক্যাডারে শূন্যপদের সংখ্যাও প্রকাশ করা হবে বিজ্ঞপ্তিতে। আবেদনের সময় প্রার্থীরা ক্যাডার পদের পাশাপাশি দিতে পারবেন নন ক্যাডার পদেও চয়েস।
এ ছাড়া গত ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশের পর অনুত্তীর্ণ কিছু প্রার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষার জন্য একই সময়ে রেজিস্ট্রেশন ও টাকা জমা দেওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীরা একসঙ্গে, পরিচিতদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ওই কেন্দ্রগুলো থেকে অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে অনেক প্রার্থী উত্তীর্ণের অভিযোগও আনেন তারা। এমন অভিযোগ এনে সরকারি কর্ম কমিশন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেন চাকরিপ্রার্থীরা। প্রার্থীদের এসব অভিযোগ আমলে নিয়েছে কমিশন। জানা গেছে, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটর টেলিটকের সঙ্গে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে কমিশনের। বিসিএসের সিটপ্ল্যান করা হয় টেলিটকের মাধ্যমে। সিটপ্ল্যানের জন্য দুটি বিষয় ভাবনায় রেখেছে পিএসসি। প্রথমটি হলো- আবেদন করা সব প্রার্থীর মধ্যে দৈবচয়নের মাধ্যমে আসনবিন্যাস করা হবে। অন্যটি হলো- অন্তত প্রতি দুই হাজার প্রার্থীর মধ্যে র্যানডম পদ্ধতিতে আসনবিন্যাস করতে হবে। প্রস্তাবনা দুটি থাকলেও সব প্রার্থীর মধ্যে দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে আসন বিন্যাস করতেই টেলিটককে নির্দেশনা দিয়েছে পিএসসি। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে কোনোভাবেই পরিচিতদের পাশাপাশি সিট পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া আগামী ৪৫তম বিসিএস থেকে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্নের পর পরই টাকা পরিশোধের সুযোগ থাকছে না। কমিশন সূত্র জানায়, প্রার্থীরা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর একটি কনফারমেশন (নিশ্চিতকরণ) বার্তা পাবেন। একইসঙ্গে তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, কবে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন তিনি। ফলে কেউ অসদুপায় অবলম্বনের উদ্দেশ্যে একসঙ্গে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেও একসঙ্গে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না। ফলে পরিচিত প্রার্থীরা পাশাপাশি আসন এমনকি একই কেন্দ্রে আসনও পাবেন না বলে নিশ্চিত করেছে কমিশন। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন প্রতিবেদককে বলেন, বিসিএস পরীক্ষা কেন্দ্র করে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। এগুলো আগামী ৪৫তম বিসিএস থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, পরীক্ষায় প্রার্থীরা যেন অগ্রহণযোগ্য কোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেন সে প্রচেষ্টা সবসময় থাকে। সিটপ্ল্যানের ব্যাপারে কেউ কেউ অভিযোগ করে থাকেন। তাই এটি ‘র্যানডম বেসিসে’ (দৈবচয়নের মাধ্যমে) করা হবে। এ ছাড়া বিসিএসে আবেদনের সময় বিধি অনুযায়ী ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন ক্যাডারের পদও পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে মেধা ও পছন্দের সমন্বয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন প্রার্থীরা। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হওয়া ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের প্রার্থীরা নন ক্যাডারে পদ স্বল্পতার সম্মুখীন হবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত শূন্য পদের তালিকা অনুযায়ী নিয়োগের সুপারিশ করা হয়ে থাকে। তাই এসব বিসিএসে নন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশে কোনো সংকট থাকবে না।