নিউজ ডেস্ক:
স্বপ্নের পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে ২৫ জুন। আর এই সেতুকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায়। স্বপ্নের এই সেতু চালুর আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নয়নের প্রতীক দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দেখার জন্য প্রতিদিন আসছে হাজার হাজার মানুষ। আর এই সেতুকে ঘিরে ইতোমধ্যেই পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মাপাড়। অনেক স্থানেই গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মোটেলসহ বিলাসবহুল বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বেসরকারিভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনেক উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে জাজিরায় জমি ক্রয় করে তাদের কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করেছেন।
পদ্মা সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্ট জাজিরার নাওডোবায় শেখ হাসিনা তাঁতপল্লীর কাজ চলমান রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু চালু হলে শুধু যোগাযোগই নয়, পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি ব্যাবসা-বাণিজ্যেও অনেক দূর এগিয়ে যাবে শরীয়তপুরের মানুষ। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য অন্যতম পছন্দের স্থান হবে পদ্মা সেতু এলাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ভরে যাবে জাজিরার পদ্মা পাড়।
স্থানীয়রা মনে করেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা এলাকায় একটি বিসিক শিল্পপার্ক নির্মাণ করা হলে দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আরো আগ্রহী হবেন। এতে অর্থনৈতিকভাবে আরো অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী হবে শরীয়তপুর জেলাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে শ্রমজীবী মানুষের। সব ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা পদ্মাপাড়ের মানুষের।
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের অন্যতম অবহেলিত এবং তিন দিক থেকে নদীবেষ্টিত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকা জেলার নাম ছিল শরীয়তপুর। মাদারীপুর মহাকুমা থেকে ১৯৮৪ সালে ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাজী শরীয়তুল্লার নাম অনুসারে তৎকালীন সরকার শরীয়তপুর জেলা ঘোষণা করে। জেলা ঘোষণার ৪২ বছরেও শিক্ষা, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাশের জেলাগুলোর তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে এই জেলা। বলা যেতে পারে, অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোঁয়া বঞ্চিত শরীয়তপুর।
কিন্তু আনন্দের বিষয় হলো, পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পর থেকেই জেলাটির দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এক সময়ের অবহেলিত এই জেলাটিই এখন নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। পদ্মা সেতুর বদৌলতে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মধ্যে পর্যটন শিল্পের জন্য এখন অন্যতম জেলা হচ্ছে শরীয়তপুর। পদ্মা সেতুকে ঘিরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি দেশের নামকরা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের শরীয়তপুরের জাজিরাসহ পদ্মা বেষ্টিত চরাঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে শরীয়তপুরের সংযোগ সড়ক এলাকাসহ সেতুর আশপাশের্^ অনেক প্রতিষ্ঠানের সত্যাধিকারীরা গড়ে তুলেছেন রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মোটেলসহ বিলাসবহুল বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জেলার নড়িয়া উপজেলার পদ্মার দক্ষিণ তীর রক্ষাবাঁধ এলাকা থেকে শুরু করে মাদারীপুরের শিবচর পর্যন্ত দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা তাদের কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জমি ক্রয় করে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ফলকের সাইন বোর্ড টানিয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর্যটনশিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে শরীয়তপুরসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ সুগম হবে। সৃষ্টি হবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের।
গোসাইরহাটে কুচাপট্টি থেকে সেতু দেখতে আশা মফিজুল ইসলাম বলেন, আর মাত্র ১০ দিন পড়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আমরা যাতায়াত করতে পারব এটা ভাবতেই বুকটা ভরে যায়। এ জন্য উদ্বোধনের আগে পরিবারের লোকজন নিয়ে দেখতে এসেছি। আমাদের মতো অনেকে পরিবার নিয়েও আসছে পদ্মা সেতু দেখার জন্য। তাই এখানে থাকার ব্যবস্থাটা যদি ভালো হয় আশা করি সামনে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরেই শরীয়তপুরে শুরু হবে উন্নয়ন কার্যক্রম। পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে এখানে তৈরি হবে থ্রি স্টার মানের হোটেল-মোটেল। এ ছাড়া গড়ে উঠবে রিসোর্ট, গার্মেন্ট, মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এতে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে শরীয়তপুর।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরে অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে চাঁদপুরের সাথে কানেকটিংয়ের জন্য মেঘনা সেতুরও সমীক্ষা চলছে। এই সেতুটিও যদি হয়ে যায় তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর, ভোমরা ও বেনাপোল বন্দরের কানেকটিভিটি হবে শরীয়তপুরের ওপর দিয়ে। সরকারি উদ্যোগে আমরা ইপিজেড তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছি। এ কারণে অনেক বৃহৎ শিল্প এখানে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপশি এখানে পর্যটন শিল্পেরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শরীয়তপুর বাংলাদেশের উন্নত জনপদ হিসেবে বিবেচিত হবে।