নিউজ ডেস্ক:
পদ্মা সেতু শুধুমাত্র দেশের দুই প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগের বাধাই দূর করবে না, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বারও উন্মোচন করছে। পদ্মা নদীর পাশেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত হংকংয়ের আদলে নতুন শহর, অলিম্পিক ভিলেজ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্কেন্দ্র, নৌ-বন্দর, অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, ইকোনমিক করিডোর, আধুনিক রেল, সড়ক ও নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার হাতছানিও মানুষকে এই স্বপ্নের পথে এগিয়ে দিচ্ছে।
ইতিমধ্যে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাড়ে কমপক্ষে ৩০ গুণ বেড়েছে জমির দাম। পদ্মা সেতুর জন্য নির্মিত এক্সপ্রেসওয়েই বদলে দিচ্ছে জেলার ভূ-অর্থনীতি। পদ্মাপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষিরাও অনেক লাভবান হবেন। ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে অর্থনীতির চাকাও সচল হবে। সাধারণ মানুষ কৃষিপণ্য সুলভ মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করবেন। পদ্মাপাড়ে নানা ধরনের শাকসবজি হয়। এসব শাকসবজি ঢাকায় নিতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগত। অথচ এখন স্বল্প সময়ে ঢাকায় নেওয়া যাবে। ট্রাক চালকরা জানান, ঘাটে চাঁদাবাজি ছাড়াও পারাপারে যে সময় লাগত, সেটি এখন আর লাগবে না। পদ্মা সেতুর কারণে শ্রীনগর ও লৌহজং শিল্প-কারখানাও হচ্ছে। গড়ে উঠছে পর্যটনকেন্দ্র। আর এভাবেই বদলে যাচ্ছে পদ্মার দুই পাড়ের দৃশ্যপট। ফেরিঘাটের দোকানিরা বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে পর্যটন শিল্পেও বিপ্লবের এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। আগের চেয়েও ব্যবসা-বাণিজ্য জমে উঠবে দ্বিগুণ।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে জমিতে একের পর এক আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড দেখা গেছে। মূলত পদ্মা সেতুকে ঘিরে দুই পাড়ে গড়ে উঠছে নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক গার্মেন্টপল্লি, কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শ্রমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১০০ বিঘা জমি কিনেছেন। একটি টেক্সটাইলের মালিক কিনেছেন ৩০ বিঘা জমি। শুধু শিল্পে বিনিয়োগ নয়, অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল করার জন্যও জমি কিনছেন।
এদিকে, বাংলাদেশের অর্থেনৈতিক সক্ষমতার স্মারক পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকার লাখো মানুষের নদীভাঙন আতঙ্কের অবসান হয়েছে। সেতুটিকে নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে এই ১৪ কিলোমিটার নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলা এবং পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করা হয়েছে। নদী শাসনের জন্য প্রথমে বালিভর্তি বিশেষ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে নদী পাড়ে। এরপর চৌকো আকৃতির কংক্রিটের ব্লক একটার পর একটা নদী পাড়ে বিশেষ কায়দায় স্থাপন করা হয়েছে। যা পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। মাওয়া এলাকায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং জাজিরা এলাকায় ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার নদীশাসন কাজ শুধু সেতু রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনই নয়, পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের বাপ-দাদার ভিটাও রক্ষা করেছে। স্থায়ী ব্যবস্থা হওয়ায় এখন ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় এ অঞ্চলের জনপদ নেই। এক সময় ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতেন পদ্মাপাড়ের অনেক মানুষ। এখন কেটেছে সেই কালো মেঘ।
নাওডোবা ইউনিয়নের ফকিরের হাটের বাসিন্দা রফিক মিয়া জানান, বর্ষা এলেই তাদের মনে নদীভাঙনের আতঙ্ক জাগত। বহুবছর ধরেই পদ্মার গ্রাসে একটু করে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তাদের গ্রাম। নদী শাসনের পর সেই ভয় আর নেই তাদের মনে। একই এলাকার বাসিন্দা লুত্ফুর রহমান বলেন, দুর্বল ও অপরিণত মাটির কারণে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার পদ্মাপাড়ের মানুষ। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীতে আকস্মিক পানিবৃদ্ধি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ফলে সবসময় হুমকির মুখে থাকে ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি। তবে নদীশাসন হওয়ায় সেই আতঙ্ক এখন আর নেই। স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।