নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিন, মাস , বছর-যুগ সবই পার হয়েছে। দেড় যুগে অনেক নেতা এসেছে, গেছে । ভোটারদের মন জয়ে ছড়িয়েছেন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি।কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। নাটোরের লালপুর বাজারের জলাবদ্ধতার কারণে জনভোগান্তির অবসান হয়নি। বরং গত দেড় যুগ ধরে জনভোগান্তি স্থায়ী রুপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহের বর্ষণে লালপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইতিপূর্বে একাধিকবার সংস্কার বা প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। প্রতিকার না পেয়ে ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, লালপুরের সব চেয়ে ব্যস্ততম এই বাজারের পানি নিঃস্কাশনের জন্য ১৯৯৬ সালে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে কয়েক বছর এই ড্রেনে জলাবদ্ধতার কিছুটা নিরসন হয়। পরবর্তিতে ড্রেনের ভেতর ময়লা-আর্বজনা ফেলার কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে ভাগারে পরিণত হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই লালপুর বাজার সহ আশেপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এদিকে গত এক সপ্তাহের বর্ষণের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় লালপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি বাজারের আশপাশের বাড়ীর উঠোনসহ বসত ঘরের মধ্যেও পানি প্রবেশ করেছে। ফলে চরম দুর্ভোগ আর সংকটে দিন অতিবাহিত করছেন এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়া লালপুর বাজারের চার পাশ জুড়ে রয়েছে লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজ, লালপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, কে এন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লালপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৩/৪ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। বর্ষা মৌসুম আসলেই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ জলাবদ্ধতায় বিলে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতাওয়াত করতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এছাড়া লালপুর বাজার জামে মসজিদের মুসল্লীদের নামাজে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ড্রেনের কারণে লালপুর পুরাতন বাজার, আবাসিক এলাকা, উত্তর লালপুর, মন্ডলপাড়া গ্রামসহ আশেপাশের ৩/৪ গ্রামেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অথচ বাজারের দক্ষিনে পদ্মা নদী আর পশ্চিম পাশে বিশাল জোলা (ক্যানেল) থাকা সত্বেও পানি নিষ্কাশনের বেশ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এই ড্রেন সংস্কার কিংবা জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ব্যবসায়ীরা জানায়, লালপুর বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করতে আসে কয়েক হাজার মানুষ। এই বাজারে বিপুল পরিমান সবজী ও মাছ আমদানী হয় এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীদের কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
এ বিষয়ে লালপুর সদর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আ স ম মাহামুদুল হক মুকুল বলেন, বাজারের কিছু ব্যবসায়ী তাদের নিজেদের দোকানের সামনে রাস্তার ওপর মাটি দিয়ে উঁচু করে নিয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এলাকাবাসী, বাজারের ভাঙ্গা রাস্তাগুলো ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের সংস্কারের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক পলাশ বলেন, বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বাজারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে রাস্তাগুলো উঁচু করে নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও বাজারের গলির রাস্তা নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।