বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / স্বপ্ন পূরণে ভাগ্য বদল ॥ পদ্মা সেতু নামেই ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন

স্বপ্ন পূরণে ভাগ্য বদল ॥ পদ্মা সেতু নামেই ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন

  • নামফলক, ম্যুরালসহ রাস্তার মার্কিং কাজ চলছে
  • উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ আশপাশের জেলায়
  • পাল্টে যাবে ২১ জেলার চেহারা

পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। নির্মাণ কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ওইদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর এ সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এবং নামকরণের বিষয়ে সারসংক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান ওবায়দুল কাদের। বেরিয়ে এসে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বাংলাদেশের সবচেয়ে আনন্দের দিনটির কথা জানান। এদিকে এখন চলছে সেতুর নামফলক, ম্যুরালসহ রাস্তার মার্কিং করার কাজ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোয়। পদ্মা সেতু ঘিরে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে যেসব প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা দেখে জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন এক সময়কার অবহেলিত এ জনপদের মানুষ। সেতুটি চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমনি সহজ হবে, তেমনি কমবে সময়ের দূরত্ব। 

নাম পদ্মা সেতুই হবে, উদ্বোধন আগামী ২৫ জুন ॥ বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ওইদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর এ সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এবং নামকরণের বিষয়ে সারসংক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবন যান ওবায়দুল কাদের। বেরিয়ে এসে অপেক্ষমাণ সাংবদিকদের তিনি বলেন, ‘বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু, সেটা কবে উদ্বোধন হবে জানার আগ্রহ সবার মধ্যে। সেই সুসংবাদ আপনাদের দিচ্ছি। ২৫ জুন শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন।’ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর নামেই হবে। এটা আমি অন্য কারও নামে দেব না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারও নামেও হবে না’। সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে, যারা বেশি বিরুদ্ধে বলছে, তাদের আগে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

বদলে যাবে ২১ জেলার অর্থনীতি ॥ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে। এই বৃহৎ অঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ইপিজেড। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে। সারাদেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা ৩টি বিভাগের অন্তর্গত। এগুলো হচ্ছে- বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি। ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। এছাড়া খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। স্বাধীনতার পর থেকে এই জেলাগুলো ছিল অবহেলিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই এসব জেলায় উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়। বৃহত্তর এই অঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রকল্প হাতে নেন।

দেশের বড় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র। আছে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র। দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র বরিশাল বিভাগেই নির্মাণের পরিকল্পনা করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়লে এই এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে। পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন, ফোর লেনের পায়রা সেতু, শেরে বাংলা নৌঘাঁটি ও ইপিজেড স্থাপিত হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে বরিশালের জেলাগুলোর সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটনের প্রসার বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পায়রা থেকে কুয়াকাটার বিস্তৃত এলাকা ঘিরে পর্যটনভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছে সরকার। এই মাস্টার প্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ন, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাভিত্তিক কার্যক্রম। পদ্মা সেতু এসব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখবে। লনা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। ব্যবসায়ীরা আমদানি ও রফতানিতে উৎসাহ পাবেন। একই সঙ্গে পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। আধুনিকায়ন হলে পায়রা বন্দর ভবিষ্যতে এক বৃহত্তম বন্দরে পরিণত হবে। এমনকি ভুটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলো পায়রার মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে উপকৃত হবে।

পদ্মাপারে আইটি পার্ক ॥ পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মাপারে হচ্ছে তাঁতপল্লী ও আইটি পার্কও। ইতোমধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় আইটি পার্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিবচরের কুতুবপুরের কেশবপুরে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি এ্যান্ড হাইটেক পার্ক’ নির্মাণে ৭০ একর জায়গা নির্ধারণ করেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। প্রকল্প পাস হলেই ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। এর বাইরে আরও অনেক ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব নার্সিং ইনস্টিটিউট এ্যান্ড কলেজ, আইএইচটি ভবন, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি ভবন, মুক্তমঞ্চ ও অলিম্পিক ভিলেজ। সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হবে বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও আইকন টাওয়ার। ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরীর (দাদা ভাই) নামে শিবচর উপজেলায় ‘দাদা ভাই উপশহর’ হাউজিং প্রকল্পের প্লট প্রস্তুতির কাজ ও বরাদ্দ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বহুতল ভবন হয়েছে এবং সেগুলোতে মানুষ বসবাস করা শুরু করেছে। প্রায় ১০৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা এ প্রকল্পে ১ লাখের বেশি মানুষের আবাসন হবে।

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় আগুনে পোড়া তিন পরিবার পেল সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে …