শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / অবকাঠামোর সাথেই শিল্পায়ন

অবকাঠামোর সাথেই শিল্পায়ন

নিউজ ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে : দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ব্যাপক সাড়া ২৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে : অবকাঠামো নির্মাণে দ্রুততার তাগিদ

একদিকে অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে এগিয়ে। আরেকদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলমান। অবকাঠামো নির্মাণের সাথে সাথেই হচ্ছে শিল্পায়ন। এভাবেই বাস্তব রূপায়ন ঘটতে চলেছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের। প্রায় ৩১ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে শিল্পনগর। এটি দেশের একশ’টি অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে সর্ববৃহৎ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে আসছে ব্যাপক সাড়া। এ পর্যন্ত দুইশ’রও বেশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। এদের সঙ্গে ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। আরও বিনিয়োগ-শিল্পায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর কোম্পানীগঞ্জ ও সন্দ্বীপ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করেছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর।

তবে ইতিমধ্যে যেসব শিল্প-কারখানার অবকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেখানে শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে ২৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো নিয়ে ১৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। এসব কারখানা চলতি বছরে উৎপাদনে যাওয়ার টার্গেট রয়েছে। আরও সমসংখ্যক শিল্প-কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন (বেজা) কর্তৃপক্ষ শিল্পে বিনিয়োগকারীদের রেডি শিল্পপ্লট বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেজা’র প্রয়াসে বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট। দেশের অন্যান্য ইপিজেড ও অর্থনৈতিক জোনের তুলনায় এখানে শিল্পপ্লটের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ।

উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার একর বিস্তীর্ণ জমিতে গড়ে উঠছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। আরো অন্তত ১৮ হাজার একর জমি নিয়ে সর্ববৃহৎ এই অর্থনৈতিক জোন সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলছে। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

এই শিল্পনগর পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে তুলতে সরকার অগ্রাধিকার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এরফলে বিনিয়োগ-শিল্পায়নে আসছে সাড়া। বিনিয়োগকারীরা শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী পরিপূর্ণ অবকাঠামো সুবিধার জন্য মুখিয়ে আছেন। যেসব শিল্প-কারখানার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে সেখানো শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে অথবা প্রক্রিয়াধীন আছে।

২০২১সালের ৩ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহনশীল, পরিবেশবান্ধব দেশের প্রথম ‘ইকো বা গ্রিন শিল্পাঞ্চল’ হতে যাচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রকল্প সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে। রফতানি লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী। ইতোমধ্যে দুইশ’রও বেশি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দশ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমানে ২৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে।

দেশি-বিদেশি শিল্প জায়ান্টরা বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে এগিয়ে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, বিআর পাওয়ার, নিপ্পন, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, মডার্ন সিনটেক্স, চীনের জিনইউয়ান কেমিক্যালস, জিয়াংজু ইয়াবাং ডায়েস্ট কোম্পানি, জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ, এসকিউ ইলেকট্রিক, সায়মান, টিকে গ্রুপ, ওয়ালটন, সামিট, বসুন্ধরা, জিপিএইচ, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এন মোহাম্মদ গ্রুপ ইত্যাদি। শিল্পজোনের ৩১ হাজার একর জমিতে পর্যায়ক্রমে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৭ লাখ, প্রকল্প সম্পন্ন হলে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের টার্গেট রাখা হয়েছে।

এখানে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা প্রায় এক হাজার একর জমিতে শিল্প স্থাপন করবে। বেপজার বিশেষায়িত ইপিজেজেড নির্মিত হবে সোয়া এক হাজার একর জমিতে। বেশিরভাগই হচ্ছে রফতানিমুখী শিল্প। তাছাড়া বিগত ১৬ মার্চ’২১ইং বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিশেষায়িত গার্মেন্টস পার্ক তৈরির জন্য ২৩৯ একর জমির ইজারা নিয়ে বেজা’র সঙ্গে চুক্তি করেন বিজিএমইএর সদস্য ৪১জন তৈরি পোশাকের কারখানার মালিক। একই দিনে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ‘সমুদ্রমুখী অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন’ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জরিপ পরিচালনার লক্ষ্যে বেজা’র সাথে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এখানে বন্দর স্থাপনে চট্টগ্রাম বন্দর কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সরাসরি শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বেসরকারি উদ্যোগ এবং যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব অব্যাহত আছে। শিল্পোদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীরা একক অথবা যৌথ উদ্যোগে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার, ইস্পাত ও লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, পাটজাত শিল্প, চামড়া শিল্প, রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও মেলামাইন, স্পোর্টস সামগ্রী, খেলনা, সাইকেল, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম, ওষুধ, মেডিকেল সামগ্রী, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, হাইব্রিড গাড়ি, মোটরযান ও অটোমোবাইল, আইটি, বিভিন্ন সেবাখাতের পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের উপযোগী শিল্প-কারখানা স্থাপন করছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তারা ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প স্থাপনে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এই অর্থনৈতিক জোন বিনিয়োগ-শিল্পায়নের সর্ববৃহৎ গন্তব্যে রূপ নিচ্ছে।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …