নিউজ ডেস্ক:
দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে জানিয়ে আগামী জুন মাসের শেষ ভাগে তা উদ্বোধনের কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার দুপুরে বনানীর সেতু ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে সেতু বিভাগের বোর্ড সভায় বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতু।
“আগামী মাসের (জুন) শেষ দিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা উদ্বোধনের সামারি পাঠাব। উনি জুন মাসে যে দিন সময় দিবেন সেই দিন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে।”
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন সেতুর উদ্বোধন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি সেতুমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই বলছি, না জেনে তো আর বলছিনা না। বলেছি, জুনের শেষে উদ্বোধন হবে, ২৩ তারিখে না।”
নির্মাণ কাজের অগ্রগতি জানিয়ে তিনি বলেন, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতুর প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। নদী শাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৯২ শতাংশ। সেতুর কার্পেটিংয়ের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ।
গত এপ্রিলে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পদ্মা সেতু চলতি বছরের শেষ নাগাদ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
তবে পরে গত ৫ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ পেছানো হয়নি। আগামী জুনেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান।
মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর।
এরপর করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার মধ্যে কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই।
বুধবারের সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে ধোঁয়াশার কিছু নেই। সেতুর কাজ শেষের দিকে আছে, অল্প কিছু কাজ বাকি। যা এই মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।”
সেতুর নাম কী হচ্ছে- সেই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আমরা শুরুতে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে, সেখানে ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার প্রস্তাব করেছি। এরপর বিভিন্ন জায়গায় থেকে বলা হচ্ছে, সংসদেও দাবি উঠেছে, পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করার।”
সেতুমন্ত্রীর ভাষ্য, “আমি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, কিন্তু তিনি রাজি হচ্ছেন না। তবে আমরা সেতু উদ্বোধনের যে সামারি পাঠাব, সেখানে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করার জন্যই নাম প্রস্তাব করব।”
সেতুর টোল ফি বেশি কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর টোল হারের একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। সেটি আসার পরে যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব। তখনই পদ্মা সেতুর টোল হার চূড়ান্ত হবে।”
সেতু বিভাগের বোর্ড সভায় কর্ণফুলী টানেলের বিষয়েও কথা বলেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বর্তমানে টানেলের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ। আশা করছি এই বছরে এই প্রকল্পের আলোর মুখ দেখবে।”