নীড় পাতা / জাতীয় / ঈদযাত্রায় স্বস্তিতে ঘরে ফেরা

ঈদযাত্রায় স্বস্তিতে ঘরে ফেরা

নিউজ ডেস্ক:
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ছাড়া অন্য সব পথে প্রায় নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরেছেন যাত্রীরা। শুক্রবার সড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লার রুটগুলোতে যাত্রীবাহী গাড়ির প্রচণ্ড চাপ ছিল। একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল এবার ঈদযাত্রায় মহাসড়কে বাড়তি সংযোজন।

এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি না থাকলেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গাবতলীতে কয়েকটি বাস কোম্পানিকে জরিমানা করেছে।

সড়কের পাশাপাশি ট্রেন ও নৌপথেও যাত্রা ছিল স্বস্তির। বেশিরভাগ ট্রেন চলেছে শিডিউল অনুযায়ী। সহনীয় যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে লঞ্চ। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে দেশের ৪২টি রুটে ৮৭টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গভীর রাত পর্যন্ত ১২০টির বেশি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ১০৯টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও ছাদে যাত্রী নেওয়া বন্ধে অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব অপরাধে চারটি লঞ্চকে জরিমানা করা হয়। এগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী-১২, ফারহান-৫, পারাবত-৯ ও সুন্দরবন-১০।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ঈদযাত্রা পরিস্থিতি দেখতে গাবতলী বাস টার্মিনাল যান। সেখানে তিনি বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার সড়কের অবস্থা ভালো। উত্তরবঙ্গ যাতায়াতে যে সমস্যা ছিল তা আমরা কাটিয়ে উঠেছি।

অপরদিকে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গতকাল দুপুরে শিমুলিয়া ফেরিঘাট পরিদর্শন করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি রুট ব্যবহার করতে যাত্রীদের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ঘাটে মানুষের অতিরিক্ত চাপ থাকলেও শৃঙ্খলা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকায় ধাপে ধাপে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ফলে এখন সড়ক, নৌ ও রেলপথে তুলনামূলক যাত্রীচাপ কম । গতকাল রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) অন্যান্য ঈদের মতো যাত্রীচাপ ছিল না। সড়কপথ ও নৌবন্দরগুলোতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা থাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয়নি। বাড়তি ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রীবহন রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাঠে ছিলেন। আজ শনিবার গার্মেন্ট ও শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়ার পর যাত্রীচাপ বাড়বে বলে ধারণা তাদের।

এদিকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী ঢাকা। গতকাল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবার নগরীর প্রায় সব সড়কেই মানুষের চলাচল কম ছিল। নগরীর কোথাও যানজট দেখা যায়নি। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ও আশপাশের বিপুলসংখ্যক বাস দূরপাল্লার রুটে যাত্রী নিয়ে চলে গেছে।

সরেজমিন গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছর ঈদে উপচে পড়া ভিড় হলেও গতকাল ছিল ভিন্নচিত্র। অনেক বাস কোম্পানির কাউন্টার থেকে যাত্রীদের ডাকতে দেখা গেছে। তবে যাত্রী কম থাকলেও অনেক কাউন্টারে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাউন্টারের বাইরে লোকাল গাড়িগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।

সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় পাবনাগামী যাত্রী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ভিড় এড়াতে এবার সকালে বের হলেও রাস্তায় বা টার্মিনালে চিরাচরিত জ্যাম ও ভিড় পাননি। তবে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। দূরপাল্লার গাড়ির টিকিট আগেই বেশি দামে বিক্রি হয়ে গেছে। তাই ভেঙে ভেঙে যাচ্ছেন। গাবতলী থেকে সেলফি পরিবহণে মানিকগঞ্জের উথলি পর্যন্ত যেতে সাড়ে তিনশ টাকা চেয়েছে। অন্য সময় দেড়শ টাকা করে নেয়। পরে দ্রুতগামী পদ্মা বাসে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত দুইশ টাকার টিকিট কেটেছেন।

গাবতলীর আগে টেকনিক্যাল মোড়ে সরকার ট্রাভেলস কাউন্টারের স্টাফ অপু রহমান যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত পাবনাগামী যাত্রীরা পাবনা এক্সপ্রেস, শ্যামলী পরিবহণ ও সরকার ট্রাভেলসে করেই বাড়ি যায়। অন্য সময় এসব পরিবহণের ভাড়া চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা। কিন্তু ঈদ উপলক্ষ্যে আগেভাগেই ছয়শ থেকে সাতশ টাকায় সব গাড়ির টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এবার সড়কে যানজট না থাকায় নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম পথ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজট নেই। শুক্রবার ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় থেকে কালিহাতী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় গাড়ি ধীরগতি ছিল। এদিকে মহাসড়কে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল দেখা গেছে। গতকাল বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় মোটরসাইকেলের জন্য পৃথক দুটি টোলপ্লাজা রাখা হলেও সেখানে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক দুই লেনের। যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেলে এই সড়কটি একমুখী করে দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন এই সড়ক হয়ে সেতু পর্যন্ত যাবে। অপরদিকে সেতু পার হয়ে ঢাকামুখী যানবাহন বিকল্প সড়ক ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা আসবে।

শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল, সীমাহীন দুর্ভোগ : লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম নৌপথ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে শুক্রবার ভোর থেকে যাত্রীদের ঢল নামে। বেলার বাড়ার সঙ্গে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঘাট এলাকা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মোটরসাইকেলের আধিক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। কয়েকটি ফেরিতে শুধু মোটরসাইকেল পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় অন্য গাড়ি উঠতে পারেনি। ফলে গাড়ির যাত্রীদের গরমে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এতে তারা কিছুটা দুর্ভোগে পড়েন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ ফেরিঘাটে অনেক গাড়ি একসঙ্গে এসে ভিড় জমিয়েছে। এতে পার্কিং এরিয়ে পূর্ণ হয়ে যায়। সংযোগ সড়কেও শত শত গাড়ির দীর্ঘ সারি। মোটরসাইকেলের সংখ্যা কয়েক হাজার। এ ঘাট থেকে ১০টি ফেরিতে যানবাহন পারাপার করা হয়।

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বাসিন্দা কবির মিয়া জানান, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছেন তিনি। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। গরমে খুব ভোগান্তিতে পড়েছেন। ফরিদপুরের সদসরপুর এলাকার বাসিন্দা মোমেনা বেগম তার পরিবার নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে অপেক্ষা করেছেন দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা। মানুষের ভিড়ে তার ছোট দুটি সন্তান নিয়ে কোনোভাবেই ফেরিতে উঠতে পারেননি। কুষ্টিয়ার যাত্রী রোকসান আক্তার বলেন, লঞ্চেও গাদাগাদি অবস্থা। তবে বাড়ি ফিরতে পারছি এটাই বড় বিষয়।’ আরেক যাত্রী জামাল হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই প্রচুর গরম। তার মধ্যে নৌযানে যাত্রীদের ভিড়। পদ্মা পার হতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে যাত্রীদের।

বিআইডব্লিউটিএ’র বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বেশি। ৮৭টি লঞ্চ চালু রয়েছে। প্রতিদিন রাত ১০টা পর্যন্ত লঞ্চ চালু থাকছে। আমরা নৌযানে বাড়তি যাত্রীবহনে সব সময় নিষেধ করে থাকি।

এদিকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে দুই লঞ্চ মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গাড়ির চাপ ছিল। বিকল্প পথ পাটুরিয়া-টেপড়া সড়কে ছোট গাড়ির সিরিয়াল দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে এ সড়কে চারশ গাড়ি পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। অপরদিকে দূরপাল্লার গাড়ি ছিল একশর বেশি।

অধিকাংশ ট্রেন চলছে সময়মতো : রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় সব কটি ট্রেন সময়মতো চলাচল করেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল পযর্ন্ত মোট ২৭টি ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। ৪টি ট্রেন গড়ে ৯ মিনিট থেকে ২৫ মিনিট বিলম্বে ছেড়েছে।

ঈদযাত্রায় ২৭ ও ২৮ এপ্রিল কমলাপুর থেকে ৩৭ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। শুক্রবার থেকে (২৯ এপ্রিল) ১ মে পর্যন্ত আরও দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করছে। এদিকে যাত্রার দিন বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে আসনবিহীন টিকিট দেওয়া হয়েছে। এক একটি ট্রেনের মোট আসনসংখ্যার বিপরীতে ২০ শতাংশ আসনবিহনী টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ফলে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে পারেননি, তাদের একটি অংশকে আসনবিহীন টিকিট কেটে ট্রেন ভ্রমণ করতে দেখা গেছে।

রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, শুক্রবার প্রায় সবকটি ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী চলাচল করেছে। এক্ষেত্রে যাত্রীদেরও ভূমিকা রয়েছে। অনেক সময় চলন্ত ট্রেন শিকল টেনে দাঁড় করিয়ে দেয় যাত্রীরা। কিংবা হাওয়া ছেড়ে ট্রেন দাঁড় করানোর মতো ঘটনা ঘটে। এবার এমনটা হচ্ছে না। যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। আমরা যাত্রীদের কাছে কৃতজ্ঞ। শুক্রবার কমলাপুর, বিমানবন্দরসহ ঢাক বিভাগের প্রতিটি স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা স্টেশন পরিদর্শন করেছেন। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলায়, যাত্রীদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছিল।

আরও দেখুন

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। …