নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে এ দেশের সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলবে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেকিন হুইটফেল্ড গতকাল সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর এক টুইট বার্তায় এ কথা জানান।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর সরকার দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে। ’ নরওয়ের মন্ত্রী আগামী নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বলে বাসস জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সামরিক শাসকরা ক্ষমতা দখল করলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (সামরিক শাসকরা) বন্দুক ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসে এবং তারপর রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজনীতিতে প্রবেশ করে। ’
নরওয়ের মন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গেও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত রবিবার সন্ধ্যায় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় বৈঠক করেন। বৈঠক নিয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা ইউক্রেনে একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতির জন্য অগ্রাধিকারের ওপরও গুরুত্ব আরোপ এবং মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকা ও অসলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামুদ্রিক খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অংশীদারিকে আরো সম্প্রসারিত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ করে অফশোর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তৈরি পোশাক খাতে নিরাপত্তা ও সবুজ উৎপাদন সুবিধা তৈরিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন।
নরওয়ের মন্ত্রী জাহাজ ভাঙা শিল্প এবং হংকং কনভেনশন অনুসমর্থনের বিষয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবিক সংকটের কথা তুলে ধরেন। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুইটফেল্ড রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তা ও বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সফরের প্রথম দিন গত রবিবার নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। রাতে তিনি ঢাকায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন।