নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা নগর পরিবহন যাত্রা শুরু করে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এ উদ্যোগ শুরুতে ব্যাপক প্রশংসা পায়। পরবর্তী সময়ে পরিবহনে বাস কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। স্টপেজে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে নগর পরিবহন থেকে আস্থা হারাতে থাকেন যাত্রীরা।
পরবর্তী সময়ে ২২ মার্চ বাস রুট রেশনালাইজেশনের ২২তম সভায় নিউজবাংলার এক পর্যালোচনা শোনার পর বিআরটিসি চেয়ারম্যান নিজেই বাসের তদারকি শুরু করেন। এর পর থেকে বাস ও ট্রিপ সংখ্যা বেড়ে যায় এই পরিবহনে।
পর্যালোচনার আগে বাস চলাচলের চিত্র
ফেব্রুয়ারি মাসের ১ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন নগর পরিবহনের বাস চলেছে যথাক্রমে ৩৮, ৩৭, ৪৩, ৩৬, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৩, ৪৩, ৪৬, ৪২, ২৯, ৪৪, ৩৯, ৩৯, ৩৬, ৩৬, ২৪, ২৪, ২৪, ২৪, ৩৩, ২৭, ২৭, ২৪, ২৭, ৩৫ ও ৩৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট বাস চলেছে এক হাজার ২৫টি। গড়ে দিনে বাস চলেছে ৩৬ দশমিক ৬০টি।
মার্চ মাসের ১ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বাস চলার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ৩৫, ৩৬, ৩৫, ২৭, ৩৪, ৩৫, ৩৪, ৩৬, ৩৮, ৩৬, ২৯, ৩৩, ৩৫, ৩৩, ৩৩, ৩১, ৩১, ২৭, ১৬ ও ৩২। এ সময়ে মোট বাস চলেছে ৬৪৬টি। গড়ে দিনে বাস চলেছে ৩২ দশমিক ৩টি।
মার্চ মাসের ২২ তারিখে বাস রুট রেশনালাইজেশনের ২২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন ৪৭টি ও আগের দিন বাস চলেছে ৪৫টি। এই সভায় নিউজবাংলার পর্যালোচনা শুনে বিআরটিসি চেয়ারম্যান তার অপারেশন বিভাগে পরিবর্তন আনেন। এর পর থেকে সুশৃঙ্খলভাবে চলছে নগর পরিবহনের বাসগুলো।
পর্যালোচনার পর বাস চলাচলের চিত্র
মার্চ মাসের ২৩ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বাস চলেছে পর্যায়ক্রমে ৪৭, ৪৫, ২৬, ৩৬, ৪৬, ৪৭, ৪৬, ৪৫ ও ৪৪টি। চলতি এপ্রিলের ১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বাস চলেছে ৩৩, ৩৯, ৪৫, ৪৩, ৪৫, ৪৫, ৪৬, ৩০, ৩৬, ৪৭, ৪৬, ৪৩, ৪৪, ১৯ (পয়লা বৈশাখ), ২৬, ৩৯ ও ৪৪টি।
মার্চ মাসের ২৩ তারিখ থেকে চলতি মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত ২৬ দিনে মোট বাস চলেছে এক হাজার ৫২টি। গড়ে দিনে বাস চলেছে ৪০ দশমিক ৪৬টি। এটা ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বাস চলাচলের থেকে বেশি। তবে প্রতিদিন ৫০টি বাস চলাচলের টার্গেট পূরণ হয়নি কখনোই।
বাস বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের
রাজধানীর পল্টনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ইয়াসিন গাজী। থাকেন মোহাম্মদপুরের বসিলায়। বসিলা থেকে নিয়মিত ঢাকা নগর পরিবহনে পল্টন যাওয়া-আসা করেন।
নিউজবাংলাকে ইয়াসিন গাজী বলেন, ‘নগর পরিবহন শুরুর আগে বসিলা থেকে পল্টনে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগত। এখন নগর পরিবহনে লাগে এক ঘণ্টার একটু বেশি। শুরুতে ভালো সার্ভিস পেতাম। মাঝে দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হতো।
‘এদিকে এই লাইনের অন্য বাস বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়ে যাই। গত মাসের শেষের দিক থেকে নগর পরিবহনের সেবার মান আবার ভালো হয়েছে। সময়মতো বাস পাচ্ছি। তবে বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার।’
২২তম সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আরও ২০টি বাস দেয়া হবে ঘাটারচর থেকে চিটাগং রুটে। তবে ইতোমধ্যে ২৭ কার্যদিবস পার হলেও মেয়রের সেই কথার বাস্তব প্রতিফলন নেই।
মোহাম্মদপুরের যাত্রী মো. শোভন বলেন, ‘সেবার মান আগের চেয়ে এখন কিছুটা ভালো। তবে ভালো সেবা দিতে হলে বাসের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। শুধু ঘাটারচর নয়, পুরো ঢাকায় এই সেবা চালু হলে নগরবাসীর কর্মঘণ্টা বাঁচবে। একই সঙ্গে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে।’
তিনটি দলে সার্বক্ষণিক তদারকি
সার্বিক বিষয়ে জানতে কথা হয় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব নীলিমা আখতারের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নগর পরিবহন যাতে ভালোভাবে চলে সে জন্য আমরা নিয়মিত মনিটর করছি। আমাদের একটি সমন্বয়কারী টিম আছে, ডিটিসিএ থেকে আরেকটি টিম রয়েছে। পুলিশ সুপার আবুল খায়ের এটা দেখেন। বাস রুট রেশনালাইজেশনের কর্মীরাও দেখেন। অনেক সময় তারা বাসে চড়ে মনিটরিং করেন। তিন পক্ষ থেকে আমরা মনিটরিং করছি।’
নীলিমা আখতার বলেন, ‘যেসব অভিযোগ আসে আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। অনেক সময় তারা ট্রিপ কমিয়ে দেয়। এটা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। ঢাকা নগর পরিবহনকে ধরে রাখতে হবে, এটাই মূল কথা।’
নতুন তিন রুটের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোকবল কম আমাদের। আমাদের রুট অ্যানালাইসিস হয়েছে। বাসের জন্য বিজ্ঞাপন দেব। বাসে রং করা হচ্ছে। নিয়মিত আপডেট নিচ্ছি। আশা করছি শিগগির আমরা নতুন তিন রুটে বাস ছাড়তে পারব।’
বিআরটিসি চেয়ারম্যান ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ায় এ বিষয়ে কথা হয় বিআরটিসির উপসচিব আমজাদ হোসেনের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মেয়রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। জ্যামের কারণে একটু সমস্যা হয়ে যায়। তবে আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি আছে। ভালো চলবে ইনশাআল্লাহ্।’