শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / ব্যয় সংকোচনের বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার

ব্যয় সংকোচনের বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার

নিউজ ডেস্ক:
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন—এই সাধারণ ভাবনার বাইরে গিয়ে ব্যয় কমানোর দিকেই মনোযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। কারণ আগামী অর্থবছরের জন্য সম্প্রসারণমূলক বাজেট থেকে সরে কিছুটা সংকোচনমূলক বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। যদিও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব নীতির প্রয়োজন রয়েছে।

কিন্তু চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে সরকারের জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেটের আকার ২ শতাংশ কমিয়ে আনতে চাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

তবে বাজেটের আকার কমলেও আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি গিয়ে ঠেকতে পারে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকায়। এটি জিডিপির ৫.৫ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্পদ কমিটির বৈঠকে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন। এই রূপরেখাকে সামনে রেখেই চূড়ান্ত বাজেট প্রস্তুত করা হবে। আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে চূড়ান্ত বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। তবে ৯ জুনের আগ পর্যন্ত এই রূপরেখায় সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ আছে এবং প্রতিবছর তা হয়েও থাকে। এতে বাজেটের আকার কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে ৯ জুন বাজেট পেশের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

গতকালের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এবার আমদানির বিপরীতে রপ্তানি কম হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমদানি যে হারে বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে সে তুলনায় কম। এর মধ্যে আবার রেমিট্যান্সে ধারাবাহিকভাবে পতন হচ্ছে। যে কারণে চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় (রিজার্ভ)। আট মাসের ব্যবধানে ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে রিজার্ভ। এ পরিস্থিতিতে ডলার খরচ কমাতে সতর্ক অবস্থানে থাকতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের একটি সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরা হয়। বৈঠকে বলা হয়েছে, অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আয় কম থাকলেও এখন বাড়ছে। অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক থাকলে আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আয় বাড়ার প্রবণতা বজায় থাকবে। তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারি ভর্তুকির বোঝা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সরকার আয় বাড়িয়ে এই বোঝা লাঘব করতে চায়। তাই আগামী অর্থবছর চলতি অর্থবছরের তুলনায় মোট রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯.৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১১.৩ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের হার প্রায় ২ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৯.৫ শতাংশ)। সে হিসাবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। শতকরা হিসাবে তা ১২ শতাংশ। তবে জিডিপির হিসাবে ১ শতাংশের বেশি কমছে লক্ষ্যমাত্রা।

আগামী বাজেটে এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব আছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি টাকা ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ ও ৫ শতাংশ।

আয়-ব্যয়ের তারতম্যের কারণে নতুন বাজেটে ঘাটতি বাড়লেও তা জিডিপির ৫-এর ঘরেই থাকছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈরী সময়ে ঘাটতি বাড়লেও সমস্যা নেই। কিন্তু সরকারের উচিত ঘাটতি নিয়ে লুকোচুরি না করা।

নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫.৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬.২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সে হিসাবে ঘাটতি কমানোর প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। কিন্তু জিডিপির তুলনায় ঘাটতি কমলেও টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়ানো উচিত। গতানুগতিক বাজেট থেকে বের হয়ে বৈরী সময় উত্তরণে বাজেট দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নেও মনোযোগী হতে হবে সরকারকে।

এডিপির বরাদ্দ বেশি বাড়ছে না : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। একইভাবে পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ইলেকট্রো মেকানিক্যাল দ্রব্যের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৯৪ শতাংশ। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয় খুব বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব নেই বাজেটে।

আগামী বাজেটের রূপরেখায় চলতি অর্থবছরের তুলনায় সরকারের পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাড়ছে ১২.৩৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সে অনুপাতে বাড়ছে না বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ। এ ক্ষেত্রে চলতি বছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ২০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।

আসছে বাজেটে এডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫.৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এডিপির আকার দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬.৫ শতাংশ।  

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, আসন্ন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়ছে খুব একটা নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ছে। তাই সরকারের আয় ও ব্যয়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু সামনে নির্বাচন, তাই কোনো রাজনৈতিক অথবা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এর পাশাপাশি যেহেতু স্বাস্থ্য খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং তা বাস্তবায়নের হারও বাড়াতে হবে।

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ব্যয় বাড়বে :

করোনার সময়ে সরকার কৃচ্ছ সাধনের চেষ্টা করেছে। গাড়িসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিলাসবহুল পণ্য ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটি খাতে কখনো হাত দেওয়া হয়নি। সেটি হলো সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা। নতুন বাজেটেও সরকারি কর্মীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেতন-ভাতায় সরকারের ব্যয় ছিল ২৮ হাজার ৮২০ কোটি টাকা, চলতি বাজেটে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি ৮.৭২ শতাংশের বেশি।

এ ছাড়া ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

জিডিপির আকার বাড়ছে : আগামী অর্থবছরের জিডিপির আকার বাড়ানো হচ্ছে। প্রাক্কলিত আকার ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭.২ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৫.৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগ আসবে জিডিপির ৩১.৫০ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪.৯ শতাংশ এবং সরকারি ৬.৬ শতাংশ।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …