নিউজ ডেস্ক:
দেশের জেলা পরিষদগুলোতে শিগগিরই প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সময় মতো নির্বাচন না হওয়ায় জাতীয় সংসদে সদ্য সংশোধিত আইন অনুযায়ী, প্রশাসক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর আইনটির গেজেট প্রকাশ হলেই প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। এজন্য গত ২৩ জানুয়ারি সংসদে তোলা আইনটি পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সংসদীয় কমিটিও স্বল্প সময়ের মধ্যে বিলটির রিপোর্ট চূড়ান্ত করে সংসদে উত্থাপন করে। কিন্তু ওই সময় দেশে করোনা সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায়, সংসদ অধিবেশন তড়িঘড়ি করে শেষ করা হয়। ফলে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনের সংশোধনীটি তখন পাস হয়নি। তবে সদ্য সমাপ্ত সংসদের ১৭তম অধিবেশনে গত ৬ এপ্রিল বিলটি পাস হয়। বিলটি রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলেই আইনে পরিণত হবে এবং গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যকর হবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিষদের চেয়ারম্যানদেরই প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে প্রশাসক নিয়োগের পর বিদ্যমান পরিষদ ভেঙে যাবে বিধায়, এর সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা তাদের পদ হারাবেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী কে এম নুরুল হুদা কমিশন জেলা পরিষদ নির্বাচন সময় মতো করতে ব্যর্থ হন। কাজী হাবীবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনেও জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে কোনও তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। কমিশনের সূত্র জানায়, এখনও বাকি থাকা দুইশোর বেশি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হলে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে জেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করবে ইসি।
আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ইউপি পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের সবগুলো প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদের ভোটার। ফলে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন না হলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না।
দেশের ৬১ জেলায় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি নির্বাচিতরা শপথ নেন। ওই বছরের জানুয়ারি মাসেই জেলা পরিষদগুলোর প্রথম বৈঠক হয়। ফলে পরিষদের ৫ বছরের মেয়াদ গত জানুয়ারিতেই শেষ হয়েছে। জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইনের ৫ নম্বর ধারায় মেয়াদের কথা বলা আছে। এতে বলা হয়— প্রথম সভার তারিখ থেকে পরিষদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। একইসঙ্গে এতে বলা হয়, ওই মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচিত নতুন পরিষদ প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদ তার কার্য পালন অব্যাহত রাখবে। তবে সংশোধনীতে কার্য পালন অব্যাহত রাখার অংশটুকু বিলুপ্ত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে ‘জেলা পরিষদ আইন ২০০০’ অনুযায়ী বিদ্যমান পরিষদের মেয়দ শেষ হলেও প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ ছিল না। তবে প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত ৮২ নম্বর ধারা সংশোধন করে সেই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনও জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তার কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনও কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে জেলা পরিষদের নির্বাচন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনও চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণসহ নির্বাচন কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
প্রশাসক নিয়োগ প্রশ্নে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশন নয় সরকারের বিষয়। এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেখবে। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই।’
পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনের সংশোধনীতে যেহেতু প্রশাসক নিয়োগের বিধান হয়েছে। আইনটির গেজেট নোটিফিকেশন হলেই জেলা প্রশাসক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
জেলা পরিষদে কারা আসবেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আইনের বিধান অনুযায়ীই নিয়োগ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, নাকি বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে বর্তমান পরিষদের চেয়ারম্যানদেরই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, নাকি অন্য কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে— সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। সরকারপ্রধান এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’