নিউজ ডেস্ক:
জন্মের পর তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ নেন বাবা জাহিদুল ইসলাম। বাংলাদেশ সচিবালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী জাহিদ সন্তানকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর মতিঝিল সরকারি কলোনিতে। চাকরির বয়স যাতে বেশি দিন থাকে সে জন্য জন্মসনদে বয়স দুই বছর কমিয়ে তথ্য দেন নুসরাতের বাবা। একইভাবে স্কুলে ভর্তির সময় নিজের সন্তান যাতে ক্লাসে প্রথম/দ্বিতীয় হয় সে জন্য অনেকে সন্তানের বয়স দুই-এক বছর কমিয়ে নতুন করে জন্মসনদ নেন। এভাবেই নানা কারণে সন্তানের বয়স কমিয়ে এক ধরনের প্রতারণা করছেন অনেক অভিভাবক। অথচ বিদ্যমান জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই আইনকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না অনেকে। জন্মনিবন্ধন ভর্তির সময় দিলেও পরবর্তী সময়ে পিইসি পরীক্ষাকালে জন্মতারিখ পরিবর্তন করেন কেউ কেউ। এতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) পলাশ কান্তি বালাকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এসএমএস করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘বর্তমান জন্মনিবন্ধন সনদে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিতে হয়। শিশুর জন্মনিবন্ধনে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন থাকলে ওই পরিবারের সব সদস্যকে ম্যাপিং করা যায়। জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে ইউনিক আইডি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সন্তানের সঙ্গে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় অনেক অভিভাবক সন্তানের এক জন্মতারিখ দেন আবার পিইসি পরীক্ষার সময় আরেকটি দেন। এতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সমস্যার কথা আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানাতে চাই। যাতে এ জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করে।’
সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জন্মসনদ ব্যবহার ও নীতিবহির্ভূত বয়স কমানো বন্ধের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং পিইসি ও জেএসসি সনদে জন্মতারিখের ভিন্নতার কারণে শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট আইডি প্রাপ্তি ও টিকা কার্যক্রমের জন্য বিদ্যমান জন্মসনদ কাজে আসছে না। এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে আইন ও বিধি অনুযায়ী বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় জমা নেওয়া জন্মনিবন্ধনের তারিখই যেন চূড়ান্ত হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে আজকের বৈঠকে।
বর্তমানে ১৯টি সেবা পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে- ১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ২. বিবাহ নিবন্ধন ৩. পাসপোর্ট ইস্যু ৪. বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ৫. ড্রাইভিং লাইসেন্স ৬. ভোটার তালিকা প্রণয়ন ৭. জমি নিবন্ধন ৮. এনআইডি কার্ড ইস্যু ৯. বীমা পলিসি গ্রহণে ১০. ব্যাংক হিসাব খোলায় ১১. আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স ১২. টিআইএন প্রাপ্তি ১৩. গাড়ি রেজিস্ট্রেশনে ১৪. ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তিতে ১৫. ঠিকাদারি লাইসেন্স পেতে ১৬. গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ১৭. বাড়ির নকশা অনুমোদন ১৮. টিকাদান কর্মসূচিসহ যে কোনো চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি এবং ১৯. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে যে কোনো সেবা প্রাপ্তি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, সিটি করপোরেশন ও বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস/মিশন মিলে ৫ হাজার ১৩৯টি নিবন্ধন অফিস জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সংক্রান্ত কাজসমূহ সম্পন্ন করছে। ২০০৬ সালে হাতে লিখে জন্মনিবন্ধন শুরু হয়। ২০১০ সালের নভেম্বর মাস থেকে BDRIS software -এর মাধ্যমে হাতে লেখা নিবন্ধনসমূহ আনলাইনে এন্ট্রি করা হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে পরীক্ষামূলকভাবে BDRIS software চালু করা হয়।