শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / নাটোর সদর / নাটোরে সজিনা আবাদ বেড়েছে

নাটোরে সজিনা আবাদ বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সজিনার আবাদ বেড়েছে নাটোরে। জেলার ১৬৪টি কৃষি ব্লকের প্রত্যেকটিতে গড়ে তোলা হয়েছে সজিনা গ্রাম। পুষ্টি ও ওষুধী গুণাগুণের কারণে অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত সজিনা । বৃদ্ধি পাচ্ছে সজিনা গাছের সংখ্যা ও এর উৎপাদন। প্রচলিত কার্টিং পদ্ধতি ছাড়াও চারা রোপণের মাধ্যমে সজিনা চাষের পরিধি বেড়েছে।

বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন সজিনার পুষ্টিগুণ ব্যতিক্রমধর্মী। আমিষের অনুপাত বিবেচনায় সজিনা গাছকেই পৃথিবীর সেরা গাছ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর পাতায় ৩৮ রকম অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮ শতাংশ আমিষ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আঁধার। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর সাতগুণ ভিটামিন সি, দুধের চারগুণ ক্যালসিয়াম এবং দুইগুণ আমিষ, গাজরের চারগুণ ভিটামিন ‘এ, কলার তিনগুণ পটাসিয়াম, পালং শাকের তিনগুণ লৌহ বিদ্যমান। পুষ্টি ও ওষুধী গুণ বিবেচনায় এই গাছকে অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ বলা হয়। বাড়ির আঙ্গিনায় এটি একটি মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ।

ভারতীয় আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্র মতে সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ প্রতিরোধ করে এবং আধুনিক বিজ্ঞানও এই ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার কচি পড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ওষুধী গুণ আছে। সজিনা বাতজ্বর চিকিৎসায় কার্যকর ভ‚মিকা রাখে। পোকার কামড়ে এন্টিসেপটিক হিসেবে সজিনা পাতার রস ব্যবহার হয়। মাথা ব্যথায় সজিনার কচিপাতা কপালের দুই পাশে ঘষলে ব্যথা উপশম হয়। সজিনা গ্যাস্টিক রোগের বায়ুনাশক হিসেবে কাজ করে। পাতার রস হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। শ্বেতীরোগ, টাইফয়েড জ্বর, প্যারালাইসিস এবং লিভারের রোগে সজিনার রস উপকার। ক্ষতস্থান সারার জন্য সজিনা পাতার পেষ্ট কার্যকরি। খাদ্যাভাসে সজিনা গাছের পাতা বা সজিনা থাকলে চোখের ছানি পড়া রোগ কম হয়। সজিনা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা এবং মাইগ্রেন চিকিৎসায় সজিনা ভাল কাজ করে। সজিনার মূল ফলন শেষে বৈশাখ– জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছ থেকে ডাল সংগ্রহ করে কার্টিং রোপণ করা হয়। বসতবাড়ি, রাস্তার ধারসহ যে কোন স্থানের মাটিতে ৩ মিটার দূরত্বে কার্টিং রোপন করা যায়। রোপনকালে গোবর সার এবং দ্রুত শিকড় গজানোর জন্য সামান্য ফরফরাস সার ও ছাই ব্যবহার করা উত্তম।

সাম্প্রতিক সময়ে পি কে এম জাতের বীজ থেকে সজিনার চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। ৩ বছর মেয়াদী বিশেষ কর্মসূচির আওতায় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর বারোমাসি সজিনার স¤প্রসারণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনায় দেশের ৪০টি হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে ৩০ লাখ চারা উৎপাদন করাহচ্ছে। আর গাছের উচ্চতা এক মিটার হলে ডগা কেটে এর আকৃতি ঝোপালো করা হলে ফলন বৃদ্ধি পায় এবং সজিনা সংগ্রহে সুবিধা হয় এবং এসব গাছে বারোমাসই ফলন পাওয়া যায় বলে জানান নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মেহেদুল ইসলাম।
নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২২০ হেক্টর আবাদি এলাকা থেকে প্রায় চার হাজার টন সজিনা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ফলে সজিনার আবাদ বাড়ছে। অনুক‚ল আবহাওয়ার কারণে বিগত বছরের চেয়ে ফলন অনেকটা বাড়বে।বসতবাড়ি ছাড়াও রাস্তার দুধারে সজিনার গাছ চোখে পড়ে। নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া, ফতেঙ্গাপাড়া এলাকায় সজিনা গাছের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। শহরতলীর বলারিপাড়া, হাজরা নাটোর এলাকার রাস্তার ধারে শোভিত অর্ধ শত গাছ নজর কাড়ে। শহরের ঝাউতলা সড়কেও এখন গাছে গাছে সজিনা। কৃষি বিভাগ জেলার ১৬৪টি কৃষি ব্লকে ১৬৪টি গ্রাম নির্বাচন করে ২৩ হাজার ১০৮ জন কৃষকের মাধ্যমে ৫৬ হাজার ৮৭২টি সজিনার কার্টিং ও চারা রোপন করেন। গড়ে তোলা হয় সজিনা গ্রাম।

এসব সজিনা গ্রামে সজিনা গাছের সংখ্যা চোখে পড়ার মত। বসতবাড়ি ছাড়াও রাস্তার দুধারে সজিনার গাছ চোখে পড়ে। নাটোর সদর উপজেলার রুয়েরভাগ এলাকার কৃষক মজিবর রহমান তার বসতবাড়ি ছাড়াও বাড়ি সংলগ্ন রুয়েরভাগ,বালিয়াডাঙ্গা সড়কের দুধারে প্রায় ১০০টি সজিনার কার্টিং ও চারা গত মৌসুমে রোপণ করেন।

চন্দ্রকোলা কৃষি ব্লকের উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, একটি গাছ থেকে দুই মণ সজিনা সংগ্রহ করা সম্ভব। সজিনা চাষ বৃদ্ধি পাওয়াতে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক সংগতিও বেড়েছে।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, গাছে গাছে এখন সজিনার প্রাচুর্য। ঝড়-বৃষ্টিমুক্ত আবহাওয়া থাকায় এবার ফলন হবে আশাতীত। একটি গাছ থেকে দুই মণ সজিনা সংগ্রহ করা সম্ভব। সজিনার আবাদ বাড়াতে নতুন কার্টিং রোপণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কর্মকর্তাবৃন্দ প্রতি বছরের মত এবারও ভ‚মিকা রাখবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসী সজিনা চাষে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া এলাকার কৃষক মোঃ খোকন এবং নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজীপুর এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম।

নাটোর কৃষি সম্প্র্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মাহমুদুল ফারুক বলেন, নাটোরে অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ সজিনার আবাদ ও উৎপাদন ক্রমশঃ বাড়ছে। সজিনা চাষ বৃদ্ধি পাওয়াতে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক সংগতিও বেড়েছে। সজিনার সকল উপাদান অর্থাৎ সজিনাসহ এর ফুল ও পাতার যথাযথ এবং বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে সুফল প্রাপ্তির পরিধি আরো বাড়বে।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …