নিজস্ব প্রতিবেদক, রাণীনগর:
নওগাঁর রাণীনগরের পারইল ইউনিয়নের আয়াতিয়া আয়েশা সিদ্দিকা বে-সরকারি শিশুসদন ও এতিমখানাটি বছরের পর বছর উন্নয়নবঞ্চিত হয়েও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও গ্রামের মানুষের দানের উপর নির্ভরশীল হয়েই এতিম, গ্রামের গরীব-অসহায় ও ছিন্নমূল শিশুদের ইসলামের জ্ঞানে আলোকিত করে আসছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. নুরে আলম সিদ্দিকী দুলাল বলেন, পারইল-বিশিয়া গ্রাম উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত হওয়ায় অবহেলিত এই অঞ্চলের শিশুদের সাধারন শিক্ষা গ্রহণের প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ইসলাম শিক্ষা গ্রহণের তেমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই। তাই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ইসলাম শিক্ষায় দীক্ষিত করতে ২০০০সালে আমি আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে এই শিশুসদনটি প্রতিষ্ঠা করি। পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠানে আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও জমি দান করে। বর্তমানে ৩৩শতাংশ জমির উপর ব্যক্তি অর্থায়নে, কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ও গ্রামের মানুষের দানের মারফতে কোনমতে নিচে ইট ও উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে ৩টি কক্ষ নির্মাণ করে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে আসছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে পারইল-বিশিয়াসহ আশেপাশের গ্রামের ১২জন এতিম ও ৩৮জন শিশুরা আবাসিক ব্যবস্থায় এবং অবশিষ্ট ৫০জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন এখানে ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে। প্রতিদিন ৫০জন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ৩বেলার খাবারের ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রয়োজন মিটাতে অনেক কষ্ট হলেও আজ পর্যন্ত আল্লাহর ইচ্ছায় চালিয়ে আসছি। গ্রামবাসীদের দান ও কিছু দানশীল মানুষদের সহযোগিতায় আজও ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে আসছে এই শিশুসদনটি। প্রতিদিনই নতুন নতুন শিশুরা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসলেও কক্ষের সংকটের কারণে জায়গা দিতে পারছি না তারপরও আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ভাগ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকারের সহযোগিতা জোটেনি। সবার সহযোগিতা নিয়ে কয়েক বছর আগে আরো দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করলেও অর্থের অভাবে তা শেষ করতে পারিনি। সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ১২জন এতিম শিশুদের জন্য বছরে কিছু সহযোগিতা পেয়ে আসছি যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
তিনি আরো বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন আছে। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারছি না। সরকারি কিংবা বেসরকারি বড় ধরনের সহযোগিতা পেলে এই শিশুসদনটিকে আধুনিকায়ন করতে চাই যেমন আধুনিক ভবন, নিরাপত্তা প্রাচীর, টয়লেট ব্যবস্থা ও চলাচলের রাস্তা নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ করাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পাদন করে একটি আধুনিক ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাই। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে কত আবেদন করেছি কিন্তু আজ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের শিশুদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। গ্রামবাসীর দানে ও কিছু মানুষের সহযোগিতায় ও আমার চেস্টায় খেয়ে না খেয়ে ৬জন শিক্ষক-কর্মচারী দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে শিশুদের মাঝে ইসলামের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসছে। আমি জানি না বেঁচে থাকাকালীন সময়ে আমার এই স্বপ্ন আল্লাহ পূরণ করবেন কি না?
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মাওলানা আসলাম উদ্দিন বলেন, আমরা ৬জন শিক্ষক-কর্মচারীরা কষ্ট করে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছি। আমরা যদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সুবিধা পেতাম তাহলে স্বাচ্ছন্দে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারতাম এবং শিক্ষার্থীরাও অনেক উপকৃত হতো বিশেষ করে এতিম যে শিশুরা আছে তারা অনেক উপকৃত হতো। বর্তমানে ৩টি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস কাম শ্রেণি কক্ষ করে মোট ৩টি কক্ষেই গাদাগাদি করে পাঠদান করে আসছি। এছাড়া নেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত থাকার ব্যবস্থা ও টয়লেটসহ অনেক কিছুই। তাই আপাতত শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর হলেই আমরা অনেক খুশি হবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, আমি দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের চেস্টা করবো। এছাড়া আবেদন পেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোন সহযোগিতা করা যায় কিনা সেই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
আরও দেখুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …