নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ-খাজুরা ইউনিয়নের বিনগ্রামে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষকসহ পাঁচজনকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব দিতে চারজন আওয়ামী লীগ নেতাকে ৭ দিন আর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতিকে ৩ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। তবে জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শোকজ প্রাপ্তরা হলেন-৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সহ সভাপতি ইউনুস আলী, একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্মী রাফিউল ইসলাম ও অপর কর্মী হারুন অর রশিদ এবং বিনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস। বুধবার (৩০ মার্চ) রামানন্দ-খাজুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস আলী ও সাধারণ সম্পাদক মুকুল হোসেন স্বাক্ষরিত শোকজে বলা হয়, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ২৮ মার্চ আপনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়া অশালীন নৃত্যানুষ্ঠান উদযাপন করিয়াছেন। এতে করে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় আগামী ৭ দিনের জন্য শোকজ করা হলো। কেন আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার জবাব ৭ দিনের মধ্যে পাঠানোর জন্য বলা হলো। অপরদিকে বিনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতিকে শোকজ করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুর রহমান।
জানা গেছে, সোমবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রভাত কাকুলী নামের একটি সমিতি। ওই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মার্জিত ভাবে অংশ নেয়। কিন্তু একই স্টেজে কাকুলী সমিতির আয়োজনে পরিবেশন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সময় স্থানীয় শিল্পীদের গানের পাশাপাশি বগুড়ার একটি ডান্স ক্লাবের শিল্পীদের অশ্লীল ডান্স পরিবেশন করা হয়। পরে এ বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে ওই শোকজ বার্তা পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগ কর্মী রাফিউল ইসলাম। আর অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসাবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়।
তবে ওই অনুষ্ঠানের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, ওই নাচ-গানের সঙ্গে আমি জড়িত নই।
বিনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, আমরা ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলা শেষ করে বাড়ি চলে এসেছি। আর শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে এ ধরনের নাচ-গানের আয়োজন করা হয়েছে। স্কুলের কোনও শিক্ষক এখানে জড়িত নয়। শোকজ পেলে জবাব দেব।
প্রভাত কাকুলী সমিতির সভাপতি ইউনুছ খান বলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজন তার সমিতি করলেও ওই অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের বিষয়ে তিনি জড়িত নন।
এদিকে রামানন্দ-খাজুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ইদ্রিস আলী ও সাধারণ সম্পাদক মুকুল হোসেন জানান, ওই চারজনকে শোকজের পাশাপাশি ঘটনার বিষয়ে জড়িতদের সনাক্ত করতে তদন্তও করা হচ্ছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড় পাবেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতিকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, স্কুল মাঠে এ ধরনের অশ্লীল নাচ-গানের পরিবেশন করা খুবই দুঃখজনক। শোকজের জবাব পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।