নিউজ ডেস্ক:
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনকে ’জেনোসাইড’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের দেওয়া স্বীকৃতির ঘোষণা আসার পরদিন মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। দেরি হলেও মোস্ট ওয়েলকাম।”
সাড়ে চার বছর আগে রোহিঙ্গা ঢলের ওই সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনকে ’জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ‘ হিসেবে বর্ণনা করেছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার কার্যালয়।
এর আগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো হত্যাযজ্ঞকে জেনোসাইড হিসেবে উল্লেখ করেছিল ফ্রান্স ও কানাডা।
গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে এক অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনকে জেনোসাইড হিসাবে ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন।
দীর্ঘদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে ’সুখবর’ হিসেবেও দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
জেনোসাইড স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় বাস্তুচ্যুত বিপুল এ জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করারও আহ্বান জানান তিনি।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা’ হয়েছে, অবশেষে মানলো যুক্তরাষ্ট্র
রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ অ্যাখ্যার আহ্বান শেষ মুহুর্তেও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পম্পেও
মোমেন বলেন, জেনোসাইডের শিকার ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসন ও ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য বড় শক্তি যারা, তারা যদি পুশ করেন, প্রেসার দেন, তাহলে আমার ধারণা, একটা সমাধা হতে পারে।
”তারা এ ব্যাপারে আরও সজাগ হবেন, যাতে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হয় এবং সুন্দর ভবিষ্যত যাতে তারা গড়ে তুলতে পারে। আশা করি, ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেটের এটা বলার পরে তারা চাপ দেবে মিয়ানমার সরকারকে, যাতে তারা নিজেদের লোকদের নিয়ে যায়।”
ফাইল ছবি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নিজেদের লোকদের নিয়ে যাবেস। কিন্তু তারা বিভিন্নভাবে এটা ধীরগতি করছেন। সেক্রেটারি অব স্টেটের বক্তব্যের পরে এটা যদি ত্বরান্বিত হয় আমরা খুশী হব। কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এদের মঙ্গল। আর যাতে এ ধরনের জেনোসাইডের শাস্তি হয়।
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের পরিচয় নিশ্চিতে দেশটি ‘দুরভিসন্ধি’ করছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, তারা বলেছিল ১১ হাজারকে নিয়ে যাবে। তারপর কমিয়ে কমিয়ে সাতশ জনের একটা তালিকা দিয়েছে। লিস্টটা এত ডিফেক্টিভ, আমরাতো কাউকে জোর করে ফেরত পাঠাব না।
”তালিকা যেটা দিয়েছে, আমার সহকর্মীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। করে দেখেছেন যে, এক পরিবারে বাপকে নিয়ে যাওয়া লিস্টের মধ্যে আছে তার বউ লিস্টে নাই। কিংবা তার ছেলেমেয়ে নাই।”
সবগুলো পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলায় কেউ যেতে রাজি হওয়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা স্বেচ্ছায় যাওয়ার বিষয় সমর্থন করি। এটা এমনভাবে তৈরি করেছে তালিকাটা, তাতে মনে হয় স্বদিচ্ছার অভাব আছে। অন্য দুরভিসন্ধি আছে।
”মিয়ানমার এ তালিকা পাঠিয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমার সহকর্মীরা দেখেছেন, এটাতে এত শুভংকরের ফাঁকি, মনে হয় এরা যাতে না যায় এ ধরনের একটা তালিকা তৈরি করেছে।”