নিউজ ডেস্ক:
স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পর সেই ১৯৭২ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান রয়েছে। দীর্ঘ ৫০ বছরের এ সুসম্পর্কের বহিঃপ্রকাশও করোনা মহামারিতে পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সেরাম ইনিস্টিটিউট সঙ্গে টিকার চুক্তি হয়েছিল ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর। ৩ কোটি ডোজ টিকার জন্য কয়েকশ’ কোটির টাকাও ভারতীয় ওই প্রতিষ্ঠানকে অগ্রিম দেয়া হয়। সারাবিশ্বে করোনার যখন মহামারি তখন নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ভারত টাকা নিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করে বিপদে ফেলে দেয়; টিকা নিয়ে হাতাশা বিরাজ করছিল; করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল; তখনই পুরোনো বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়ে বাংলাদেশের দিকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে টিকা দিয়ে সহায়তা শুরু করে। এখনো সেই সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মাধ্যমে কোভিড সংক্রান্ত উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারেরও বেশি অনুদান প্রদান করেছে। এ সহায়তার মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচানো এবং করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হয়েছে, রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সক্ষমতা ও পরিবীক্ষণ জোরদার হয়েছে, আক্রান্তের ব্যবস্থাপনা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ চর্চা জোরদার হয়েছে এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ও দ্রব্যসামগ্রী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নত হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ফলে সম্মুখসারির কর্মীরা সুরক্ষা পেয়েছে এবং সংক্রমণ থেকে কীভাবে নিজেদের আরো সুরক্ষিত রাখা যায়, সে বিষয়ে জনসচেতনতা বেড়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু টিকা কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ নয়। দুই দেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে আগামী মাসগুলোতে দু’দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীর দিনেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে বিøঙ্কেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে ওয়াশিংটন যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস’র ঢাকার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনে যাওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতার ইঙ্গিত। সম্প্রতি মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারাও বলেছেন, তারা আগামী ৫০ বছর বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছুক। এদিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, আমি মনে করি এসব যোগাযোগ এ ইঙ্গিতই বহন করছে, যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে বিনামূল্যে ফাইজারের তৈরি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডোজ টিকা অনুদান দেবে যুক্তরাষ্ট্র। যা বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলায় নেতৃত্বদানে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর অঙ্গীকারের প্রত্যয়। এর অংশ হিসেবেই একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এর মধ্যেই সর্বোচ্চ ৬ কোটি ১০ লাখ টিকা অনুদান পেয়েছে।