- এসএমএস ছাড়াই মিলছে টিকা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ছিল বৃহস্পতিবার। এদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশজুড়ে পালন করা হয় নানা আয়োজন। তবে ভিন্ন ধারার আয়োজন করে স্বাস্থ্য বিভাগ। মহামারী থেকে উত্তরণের পর স্বাভাবিক হচ্ছে দেশ। প্রায় দুই বছর পর জনজীবনে ফিরতে শুরু করেছে ছন্দ। আর এই ছন্দের অন্যতম প্রধান উপাদান করোনার প্রতিষেধক টিকা। ইতোমধ্যে প্রথম ডোজের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে দেশ। দ্বিতীয় ডোজের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণের পথে। করোনা প্রতিরোধে শক্ত ইমিউনিটি তৈরি করতে দেশজুড়ে শুরু হওয়া বুস্টার ডোজও চলছে পুরোদমে। এই কার্যক্রমকে গতিশীল করতে এবং জাতির পিতার জন্মদিনকে স্মরণীয় করতে দেশজুড়ে শুরু করা হয়েছে বুস্টার ডোজের বিশেষ ক্যাম্পেন। এই ক্যাম্পেনের আওতায় এসএমএস ছাড়াই বুস্টার ডোজের টিকা পাচ্ছেন টিকাগ্রহীতারা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেন চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ৩ কোটি ২৫ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পাবে ২ লাখ মানুষ। এ সময় দেয়া হবে প্রথম ডোজের টিকাও।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহীতাদের সঙ্গে বুস্টার ডোজের টিকাগ্রহীতাদের উপচেপড়া ভিড় ছিল কেন্দ্রগুলোতে। এদের বেশিরভাগেরই আসেনি এসএমএস। রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কেন্দ্রে বুস্টার ডোজের টিকা নিতে এসেছেন কামরুননাহার বেগম। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছি গত বছরের অক্টোবরে। এখনও বুস্টারের জন্য এসএমএস আসেনি। আমার ছেলে কয়েকবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু আশানুরূপ কোন ফল পাওয়া যায়নি। আজ তাই বিশেষ এই ক্যাম্পেনে টিকা নিতে চলে এসেছি।
রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টি বি হাসপাতালে ষাটোর্ধ মাকে নিয়ে বুস্টার ডোজের টিকা নিতে এসেছেন নিপু বড়ুুয়া। তিনি বলেন, এসএমএস আসছিল গত মাসে। কিন্তু নিচ্ছি নেব করে করে নেয়া হয়নি। আজকে জাতির পিতার জন্মদিনে পরিচালিত এই বিশেষ ক্যাম্পেনে তাই মাকে নিয়ে বুস্টার টিকা নিতে চলে আসলাম। ধন্যবাদ সরকারকে এত স্বল্পতম সময়ে সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার জন্য। একবছর আগেও যে আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করতাম তা আর এখন নেই।
কেন্দ্রটিতে অন্যদিনের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি টিকাগ্রহীতার উপস্থিতি ছিল জানিয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আয়েশা আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, বিশেষ ক্যাম্পেন হলে মানুষের ভিড় একটু বেশি হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বুস্টার ডোজের টিকার জন্য এর আগে একদিনে এত মানুষের উপস্থিতি দেখিনি। এইভাবে চলতে থাকলে ৩১ মার্চের মধ্যে ৩ কোটির বেশি মানুষ টিকা পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বুস্টার ডোজের বিশেষ ক্যাম্পেনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ডাঃ শামসুল হক এসব তথ্য জানিয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস উপলক্ষে সকাল থেকে একযোগে টিকার বিশেষ ক্যাম্পেন শুরু হয়েছে। এই ক্যাম্পেনে নতুন করে কোন কেন্দ্র করা না হলেও নিয়মিত কেন্দ্রগুলোতে জোর দেয়া হয়েছে বুস্টার ডোজের টিকা দেয়ায়। এই কার্যক্রম চলবে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। এই কার্যক্রমে সব স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেয়া চলমান থাকবে। ১২ বছরের বেশি যেসব ব্যক্তির প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর ২৮ দিন পার হয়েছে, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হবে। আগে ষাটোর্ধ নাগরিক এবং করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের এই ডোজ দেয়া হলেও এখন ১৮ বছর বয়সী এবং টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর চার মাস পার হয়েছে এমন যে কেউ এই টিকা নিতে পারছেন। তিনি বলেন, যেসব ব্যক্তি প্রথম ডোজে এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাদের ২ মাস ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হবে। এ ছাড়া গত ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১ দিনে ১ কোটি প্রথম ডোজের ক্যাম্পেনে যারা টিকা নিয়েছেন। তাদের আগামী ২৮ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত টিকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নির্ধারিত ক্যাম্পেন কেন্দ্র থেকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্র বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের ৪ মাস পর বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর ৪ মাস চলে গেছে তারা এসএমএস না পেলেও কেন্দ্রে এলে টিকা নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সম্মুখসারির যোদ্ধা, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং নারীদের প্রাধান্য দিতে হবে। তিনি জানান, ১২ বছরের বেশি বয়সী কিন্তু এখনও প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেনি, তাদের এই ক্যাম্পেনে টিকা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান তিনি।
ইতিপূর্বে বুস্টার ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৪০ বছরের পরিবর্তে ১৮ বছর করা হয়েছে। এ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না ও ফাইজার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা অনুযায়ী বুস্টার ডোজ হিসেবে দিতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে প্রচারের উদ্যোগ নিয়ে কর্মসূচীকে সফল করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতারা ও বিভিন্ন অংশীজনের সহযোগিতায় আসন্ন কোভিড-১৯ টিকা ক্যাম্পেনকে সাফল্যে কাজ করতে হবে।