নিউজ ডেস্ক:
আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ হবে : গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ পুরোদমেই চলছে। প্রকৌশলীদের তত্ত¡াবধানে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৩২ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু এ কাজে গতি বাড়ানোর কথা বলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতি (প্রথম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় সম্প্রসারণ কাজ (থার্ড টার্মিনাল) ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাজের মোট অগ্রগতি ৩২ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার আশা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে এয়ারপোর্ট নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। নির্মাণের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
জানা যায়, নির্মাতা রোহান বাহরিনের নকশাতেই তৈরি হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। যেখানে থাকবে একসঙ্গে দেড় হাজার গাড়ি পার্কিং সুবিধা, যাত্রীদের সবচেয়ে কম সময়ে সেবা দিতে থাকবে ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, আর ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার। সক্ষমতা তৈরি হবে বছরে দুই কোটি মানুষকে সেবা দেওয়ার। এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিরতিহীনভাবে কাজ চলছে আড়াই লাখ বর্গমিটার ইয়ার্ডজুড়ে।
চকচকে টার্মিনাল, সুপারফাস্ট চেক ইন, ইমিগ্রেশন কাউন্টার কিংবা বোর্ডিং ব্রিজ দেখে মনে হবে বিশ্ববিখ্যাত চাঙ্গী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দরে নেমেই হাতের নাগালে পাতাল রেল কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এক মুহ‚র্তেই পৌঁছে যাওয়া যাবে শহরের আরেক প্রান্তে।
বর্তমানে দুই টার্মিনালে একসঙ্গে মাত্র ১২টি উড়োজাহাজ পার্ক করতে পারে, কিন্তু নতুন টার্মিনালে থাকবে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করার সুবিধা। দুই জাপানিজ কোম্পানি মিতসুবিশি আর ফুজিতার সঙ্গে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল তৈরিতে কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কনস্ট্রাকশনও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৫০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনালে একসঙ্গে থাকবে কেবিন এক্সরে মেশিন ৪০টি, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট, ১১টি বডি স্ক্যানার ও টানেল। থাকবে ৫৪ হাজার বর্গমিটারের বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং, নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ও ৬৩ হাজার বর্গমিটারের এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স। এছাড়া থাকবে রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ৪ হাজার বর্গমিটার ইকুইপমেন্ট স্টেশন।
উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য তৈরি হবে ২৪ হাজার বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর), ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে (অন্যান্য) এবং ২২ হাজার বর্গমিটার র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর) ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (দক্ষিণ), ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার সোল্ডার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার ও ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস)।
টার্মিনালের চারদিকে থাকবে নিñিদ্র বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি গেট, গার্ড রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। এর বাইরে ল্যান্ড সাইড, সার্ভিস রোডসহ এলিভেটেড রোড, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ইনটেক পাওয়ার প্ল্যান্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য সিকিউরিটি ও টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক সব সুবিধা থাকবে। এছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে ফানেল টানেল রাখা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের অ্যাপ্রোনে একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। এছাড়া থাকবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা। ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে প্রকল্পে। থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। সব মিলিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে থার্ড টার্মিনালে।
২০১৯ সালের শেষে শুরু করা নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের জুনে। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। প্রথমে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের সংস্থা জাইকা।
সম্প্রতি সরেজমিন বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকার ক্রেনগুলো ঘুরছে একদিক থেকে অন্যদিকে। পাশে বিমানবন্দর থাকায় কিছু দূর পরপরই থাকছে বিভিন্ন সতর্কতা ও নির্দেশনা সংক্রান্ত সাইনবোর্ড। তবে নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও শ্রমিক-কর্মচারী ছাড়া ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ভেতরের গেটগুলোয় থাকছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক ইনকিলাবকে বলেন, এতদিন নির্মাণকাজের কিছুই বাইরে থেকে দেখা যাইনি। পুরো কাজটিই ছিল আন্ডারগ্রাউন্ডে। এখন থেকে শুরু হবে বাইরের নির্মাণকাজ।
তবে নির্মাণের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে প্রকল্প পরিচালক বেবিচকের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মাকসুদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানের পিআরও সাথে যোগাযোগ করার জন্যও পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা। পরে সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানের পিআরও এর সাথে যোগাযোগ করা হলে উনার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এরপর যোগাযোগ করা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসানের সাথে। এ সময় তিনি ইনকিলাবকে বলেন, দিন-রাত নির্মাণ কাজ চলছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ হবে।
উল্লেখ্য, হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে বর্তমানে যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। নতুন টার্মিনাল হলে শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ২ কোটি যাত্রী সেবা পাবেন।