নিউজ ডেস্ক:
দেশের ‘উত্তরাধিকার আইন’ এখনও নারী-পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এজন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার পান না তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষরা। তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, দেশে পারিবারিক সম্পত্তির ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা স্ব-স্ব ধর্মের আইন ব্যবহার করেন। মুসলমানদের সম্পত্তি ভাগাভাগি হয় মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের মাধ্যমে। এ আইনে সন্তানদের কথা বলা হয়েছে। সন্তান মানে পুত্র ও কন্যা সন্তান। এখানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তাই সম্পত্তির ভাগও পান না তারা।
বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে তাদের সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি। সরকার ২০১৩ সালে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও আইনি জটিলতায় সম্পদের ভাগ পান না তারা
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তি ভাগাভাগি হয় হিন্দু আইনে। এ আইনেও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। সেজন্য সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত হন তারাও। বিষয়গুলো মাথায় রেখে গত এক মাস আগে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের ‘পুরুষবাচকতা’ অথবা ‘নারীবাচকতা’ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এরপর চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে তাদের সম্পদের উত্তরাধিকার অর্জনের কথা বলা হয়েছে।
পুরুষ অথবা নারী হিসেবে পরিচিতি নির্ধারিত না থাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন / ছবি- সংগৃহীত
তিনি বলেন, দেশের সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিষয়ে আলাদা আইন থাকলেও পুরুষ অথবা নারী হিসেবে পরিচিতি নির্ধারিত না থাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিগৃহীত হচ্ছেন, কেউ কেউ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছেন।
ফলে সমাজে অসাম্য ও বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসন রয়েছে। এজন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছেভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী
‘ফলে সমাজে অসাম্য ও বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসন রয়েছে। এজন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে’— বলেন ভূমিমন্ত্রী।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত প্রস্তাবনা আইন ও বিচার বিভাগে পরীক্ষাধীন আছে / ছবি- সংগৃহীত
তিনি আরও বলেন, ‘একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পত্তির কত অংশ পাবেন তা তার বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ হবে। বিষয়গুলো নির্ধারণ করে আমরা পাঠিয়েছি। একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, যার মধ্যে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বেশি, তিনি কতটুকু পাবেন তা হিসাব করে পাঠিয়েছি।’
‘তার মধ্যে নারীর বৈশিষ্ট্য বেশি হলে কী পরিমাণ পাবেন অথবা বৈশিষ্ট্য সমান-সমান হলে কী পরিমাণ পাবেন, সে বিষয়গুলোও হিসাব করে আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠিয়েছি।’
যুগ্ম সচিব বলেন, এসব (উত্তরাধিকার) আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেবে এটা কীভাবে (বাস্তবায়ন) করা যায়।
একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পত্তির কত অংশ পাবেন তা তার বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ হবে। বিষয়গুলো নির্ধারণ করে আমরা পাঠিয়েছি। একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, যার মধ্যে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বেশি, তিনি কতটুকু পাবেন তা হিসাব করে পাঠিয়েছিমো. খলিলুর রহমান, যুগ্ম সচিব (আইন- ১), ভূমি মন্ত্রণালয়
খলিলুর রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পত্তির অংশ যাতে নিশ্চিত করা হয়। সেজন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ও এ বিষয়ে কাজ করছেন।’
বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা / ছবি- সংগৃহীত
আমরা আশা করছি সংশ্লিষ্টরা খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সাড়া দেবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে আপনি-আমি যেভাবে সম্পত্তির অধিকার পাই, একইভাবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও তাদের অধিকার পাবেন— বলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে তাদের সংখ্যা এর চাইতে অনেক বেশি। সরকার ২০১৩ সালে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও আইনি জটিলতায় সম্পদের ভাগ পান না তারা।