নারদ বার্তা পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে
নিউজ ডেস্ক:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কম দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড প্রদান করা হবে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সূচনা বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা বলেছি। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভোজ্য তেলের ভ্যাট কমিয়ে দেয়া বা একটু সমন্বয় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। যাতে রমজান মাসে কোন সমস্যা না হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হলে তখন আর খুব বেশি করার কিছু থাকেনা। তখন একটু ‘কমপ্রোমাইজ’ করতেই হয়। যুদ্ধের কারনে (রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ) পরিবহন ব্যয় অর্থাৎ কার্গো ভাড়া খুব বেড়ে গেছে। কারণ, সোয়াবিন তেল আমাদের ব্রাজিল থেকে এবং পামওয়েল মালয়েশিয়া থেকে আসে।
যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখনো ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে আমাদের। সেখানে কোন অসুবিধা নাই।
ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, কারো এতটুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে, যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করবেন। প্রত্যেকটা এলাকাতেই কিছু না কিছু উৎপাদন হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে আন্তর্জাতিক প্রামান্য দলিলে স্থান করে দেয়া এবং সর্বশেষ জয় বাংলাকে জাতীয় শ্লোগান ঘোষণায় তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান আমাদের হয়েছে। স্বাধীনতার চেতনা যা মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল সেগুলোকে পুণরুজ্জীবিত করে একে একে সামনে নিয়ে আসার কাজটা আমরা করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আহুত সংলাপে যোগদান করায় ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দ ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিএনপির অংশ না নেয়ার কঠোর সমালোচনা করে তাদের ‘নেতৃত্বের শূণ্যতা’ তুলে ধরেন।
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন ছবিসহ ভোটা তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণ এবং বর্তমানে ইভিএম এর মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি। এগুলো করায় মানুষের ভোটের অধিকারটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। বিএনপি সরকারের করে যাওয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কথাও উল্লেক করেন তিনি।
জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় তুলে আনায় তার সরকারের সাফল্য উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ যা রয়েছে সেগুলো মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ আলোচনা যেমন চলছে, তেমনি তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত দেশের ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ আনায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পায়রাতে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হচ্ছে হচ্ছে এবং দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে। যেখানে গ্রিড লাইন নেই বা নির্মাণ সম্ভব নয়, এ রকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার প্যানেল এবং সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে-সন্দিপ এবং ভোলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
জাতির পিতার ‘গুচ্ছগ্রাম’ প্রকল্পের পদাংক অনুনরণ করে গৃহহীণদের জন্য ঘর করে দেওয়া তার সরকারের প্রকল্পের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখ ঘর বিনে পয়সায় দেয়া হয়েছে। আরো ৫০ ঘর-বাড়ি দেয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য ‘পোর্টেবল হোম’ করা হচ্ছে। আমরা জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। এ সময় এ দেশের মানুষ হতদরিদ্র থাকবে, এটা হতে পারে না।
তিনি বলেন, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া, লার্নিং এন্ড আর্নিং এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে বসে বিদেশি মুদ্রা আয়ের পথ সৃষ্টি, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য স্বীকৃতির ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেয়ার জন্য যা যা করার দরকার তাই আমরা করে যাচ্ছি। ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো জনগণের কল্যাণ চিন্তা না করলেও আমরা চাই তা করতে এবং জনগণের জীবনমানের উত্তোরণ ঘটাতে। যেটা জাতির পিতারও স্বপ্ন ছিল।
