নিউজ ডেস্ক:
বিদ্যমান পরিস্থিতি ও জনজীবনের সংকট মোকাবিলায় জোট কার্যক্রম শক্তিশালী করতে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সরকারবিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। অবহেলা ও অবমূল্যায়নের অভিযোগে ক্ষুুব্ধ জোট শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর পাশাপাশি মান-অভিমান দূর করতে প্রধানমন্ত্রী এই বৈঠক ডেকেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বৈঠকে প্রতিটি শরিক দলের দু’জন করে শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এবং সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন নেতাও বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। আমন্ত্রিত নেতাদের কভিড টেস্ট করা হয়েছে। ১৪ দলের কার্যক্রমে দীর্ঘদিন নিষ্ফ্ক্রিয় থাকা জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাসদ আজকের বৈঠকে যাচ্ছে না। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অর্থাৎ তিন বছরের বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো .আন্দোলন-সংগ্রাম ও নির্বাচনের মাঠের দীর্ঘদিনের মিত্র শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের কিছু দিন আগে জোট নেতাদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করেন। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৪ দল শরিকদের কারও ঠাঁই হয়নি। এর আগের দুই মেয়াদের সরকারে থাকা মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা ১৪ দল শরিকদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর অথবা বিরোধী দলে থেকে দলীয় কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেন। পরে সংসদ নির্বাচনের বিজয় উদযাপনে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ বিজয় সমাবেশ করে। সেখানে মহাজোট কিংবা ১৪ দলের শরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ ১৪ দল শরিকরা মাঝেমধ্যেই সরকারের কঠোর সমালোচনা করে আসছে। এ নিয়ে নানা টানাপোড়েনও দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিন বছর ধরে ১৪ দলের কার্যক্রম ঢিমেতালে চলে আসছে। শরিক দলগুলোর নেতারা সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের দাবি জানালেও তা উপেক্ষিত হয়ে আসছিল।
এমন পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিষয় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জনজীবনের নানা সংকট, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে ১৪ দল শরিকসহ জাতীয় পার্টিও সরকারের কঠোর সমালোচনায় মুখর রয়েছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোও বিক্ষোভে নেমেছে। ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ইস্যুতে বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য আগামী ২৮ মার্চ সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে। একই দিন ও একই সময় হরতাল ডেকেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও হরতাল ডেকেছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৪ দলকে কার্যকর করার পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোটগতভাবে করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক ডেকেছেন বলে মনে করছেন ১৪ দলের নেতারা।
যাচ্ছে না বাংলাদেশ জাসদ :১৪ দল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা থেকে সরে গেছে কিংবা ১৪ দল এখন অপ্রয়োজনীয় ও অতীত- এমনসব বক্তব্য দিয়ে জোটের বৈঠক ও সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের কার্যক্রম বর্জন করে আসছে বাংলাদেশ জাসদ। ২০২০ সালের শুরুর দিকে ১৪ দলের দিবসভিত্তিক একটি আলোচনা সভায় যোগদানের পর থেকে আর কোনো কার্যক্রমে অংশ নেয়নি দলটি। তারা ‘বর্তমান সরকার ১৪ দলের নয়, শুধু আওয়ামী লীগ সরকার’ আখ্যা দিয়ে সরকারের কাজের সমালোচনা ও ব্যর্থতা তুলে ধরছে।
এর আগে তিনটি নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচিত বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল মারা গেলে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে তার স্ত্রী সেলিনা খান ১৪ দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। ওই আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ বিজয়ী হন। ফলে সংসদে বাংলাদেশ জাসদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমন্ত্রণ পাওয়ার পরও বাংলাদেশ জাসদ আজকের বৈঠকে অংশ নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া সমকালকে বলেছেন, তারা আগে থেকেই বলে আসছেন ১৪ দল এখন মৃত এবং অতীত। এটিকে পুনরুজ্জীবনের কোনো সম্ভাবনাই নেই। ১৪ দলের ২৩ দফা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকেও সরে এসেছে জোটটি। জনজীবনের সংকট নিরসন কিংবা জনদাবিতে ১৪ দলের কোনো কার্যক্রমও রাজপথে নেই। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে নিয়ে আলাদাভাবে সক্রিয় হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
নেতারা যা বললেন :১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী ১৪ দল নেতাদের ডেকেছেন। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং ১৪ দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ২৩ দফার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ১৪ দল এখনও প্রাসঙ্গিক। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ১৪ দলের সংগ্রাম এখনও সফলতা পায়নি। এ কারণে কিছু সমস্যা থাকলেও জোট ঐক্যবদ্ধই রয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ১৪ দলকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বৈঠকে তারা জনজীবনের সংকট নিরসন এবং রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও আগামী নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা বলবেন।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, অনেক দিন পর বৈঠক হলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জোটের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বৈঠকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন।
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রায় তিন বছর পর অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে রাজনীতি ও নির্বাচনসহ সব বিষয়েই আলোচনা হবে।