নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, বাংলাদেশকে আপনার ব্যবসার গন্তব্য বানান। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার স্থান।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশে বিশ্বের সেরা গন্তব্য হিসেবে খুঁজে পান তার জন্য বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের নীতিগত এবং অবকাঠামোগত সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।’
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আছে দুর্দান্ত ভূ-কৌশলগত অবস্থান। সকল প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন রুটের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। এছাড়াও জনবহুল এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৬৮ মিলিয়নের বেশি মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজার অফার করছে। এই মানুষগুলো তরুণ, উদ্যোমী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’
বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে শ্রমিক পাওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের শ্রমশক্তি কঠোর পরিশ্রমী, এ শ্রমশক্তি সাশ্রয়ী এবং তারা দ্রুত শিখতে পারে।’
সারা দেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার সঙ্গে বাংলাদেশের সাড়ে ৬ লাখের বেশি পুরোপুরি দক্ষ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপার্স থাকার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলো বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষি খাতে উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, উৎপাদনশীলতা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়ণ, শিল্পায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার-উদ্ভাবন-বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে জনগণের প্রযুক্তিগত কানেকটিভিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আমাদের উৎপাদনগুলোকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে আরও মসৃণভাবে সংযুক্ত করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোষাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। চামড়া, পরিবেশ বান্ধব পাট-পাটজাত পণ্য, খাদ্য এবং সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদানেও বাংলাদেশ ভালো করছে।
টানা তিনবারের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই করোনা মহামারিতে বিশ্বের যে গুটিকয়েক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমাদের স্বচ্ছ লক্ষ্য, বিচক্ষণ পরিকল্পনা, সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কঠোর পরিশ্রমী মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং উদ্যোমী উদ্যোক্তাদের কারণে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিষ্ময়।’
সেন্টার পর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্স (সিইবিআর) ধারণা মতে ২০৩৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘উন্নয়ন মডেল’ এর দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এর ওপর ভর করে আরও উন্নয়ন করা যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে শীগ্রই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে।
দুবাই প্রান্তে উপস্থিত থেকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জেইয়োদি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরোই।
পরে দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে এফবিসিসিআই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্স একটি সমঝোতা স্মারক সই করেন। সমঝোতা স্মারকে সই করেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরোই।
অনুষ্ঠানে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভবনা তুলে ধরে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আবুধাবি আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ মার্চ দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।