নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বের যুদ্ধপীড়িত দেশগুলোতে শান্তি স্হাপনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আগে থেকেই ব্যাপক প্রশংসিত। এই কার্যক্রমে পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
দক্ষিণ সুদানে বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি মানবিক সেবা দিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। একদিকে অস্ত্র হাতে নিরাপত্তা টহলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন, অন্যদিকে নারী জনগোষ্ঠীকে সেলাই মেশিন, কুটিরশিল্পসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। মাতৃত্বকালীন চিকিত্সাসেবা দিচ্ছেন। খেলাধুলার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। করোনা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
জুবা ও ওয়াও প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই গোত্রে গোত্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দিনে-রাতে টহল দেন নারী শান্তিরক্ষীরা। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্হ্যসেবার দিকটিও তারা দেখেন পরম মমতায়। ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে নারী-শিশুদের সব ধরনের চিকিত্সাসেবা দেওয়া হচ্ছে। চশমাও দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণও বিতরণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এসব মানবিক সেবা দেওয়ায় সুদানবাসী নারী শান্তিরক্ষীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত নিকোলাস হেইশাম দক্ষিণ সুদানে নারী শান্তিরক্ষীদের এই কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘জাতিগত সংঘাতপূর্ণ এলাকায় অস্ত্র হাতে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি মানবিক সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন নারী শান্তিরক্ষীরা। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্হাপনে বাংলাদেশের নারী সেনারা যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন, তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। এসব কর্মকাণ্ড দেখে আমি অভিভূত। আশা করি, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মানবিক সেবা দেখে অন্য দেশের শান্তিরক্ষীরাও শিক্ষা গ্রহণ করবেন।’ দক্ষিণ সুদানে কর্মরত নারী শান্তিরক্ষীদের তিনি শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করেন।
দক্ষিণ সুদানে নারী শান্তিরক্ষীরা
দক্ষিণ সুদানের ওয়াও প্রদেশের ওয়েস্টার্ন বাহার এল গজলের গভর্নর সারাহ স্লেটো রিয়াল দেশটিতে কর্মরত নারী শান্তিরক্ষীদের মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, নারী ও শিশুদের এমন কোনো সেবা নেই, যা দেওয়া হচ্ছে না। মানবিক সেবায় নারী শান্তিরক্ষীরা অনন্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন। দক্ষিণ সুদানে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দক্ষিণ সুদানে আমরা নারীদের সব ধরনের মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে দক্ষিণ সুদানের নারীরা এখন কাজ করছেন।’
আজ বিশ্ব নারী দিবস। দিবসটি পালনে দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবা ও ওয়াও প্রদেশে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন নারী শান্তিরক্ষীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি র্যালি, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হবে। জুবায় এসব কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেবেন মেজর ডা. নিগার। তার সঙ্গে থাকবেন ক্যাপ্টেন মহুয়া, ক্যাপ্টেন তোবাসহ ২৪ জন নারী সদস্য। তিন জন অফিসার ও বাকিরা সৈনিক।
ওয়াও প্রদেশে বিশ্ব নারী দিবসের কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন লে. কর্নেল সিনথিয়া, মেজর জিনাত, ক্যাপ্টেন নাফিজা, ক্যাপ্টেন মিরাজী ও ক্যাপ্টেন রিয়া। এই পাঁচ কর্মকর্তাসহ ৪১ জন সদস্য কর্মসূচি পালনের দায়িত্বে থাকবেন। বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মিশনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পাশাপাশি চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীরা অনুষ্ঠানে উপস্হিত থাকবেন।