নিউজ ডেস্ক:
দেশের পাটশিল্পের লোকসান ঠেকাতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে ২০২০ সালের জুলাই মাসে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেয় সরকার। এরপর বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় আধুনিকায়ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতোমধ্যে দুটি পাটকলের (নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস) ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। এছাড়া আরও দুটি জুট মিলের লিজ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বাকি ১৩টি মিল লিজ দেয়ার জন্য দ্বিতীয় বারের মতো ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়েছে। পুনরায় চালু করা মিলে অবসায়ন শ্রমিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। এই বাস্তবতায় আজ রবিবার দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় পাট দিবস। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘অবসায়নের পর মিলগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় লিজ দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি পাটকলের (নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস) ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আরও দুটি জুট মিলের লিজ প্রক্রিয়া চলমান। অবশিষ্ট ১৩টি মিল লিজ দেয়ার জন্য দ্বিতীয় বারের মতো ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুততম সময়ে আরও কিছু মিল চালু করা সম্ভব হবে। পুনরায় চালু করা মিলে অবসায়ন শ্রমিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে এসব মিলে নতুন করে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা দক্ষ। বেসরকারীভাবে যারা আসবে তারা প্রথমে দক্ষ শ্রমিক নেবে। তারপর নতুন শ্রমিক। যেকোন জায়গায় দক্ষ শ্রমিকের খুব টানাটানি আছে। আমরা যে দুটি মিল দিয়েছি, সেখানে এরই মধ্যে দক্ষ শ্রমিকরা কাজে রয়েছে। আমরা সামনে কোন শ্রমিক অসন্তোষ দেখছি না। নতুনভাবে কাজ শুরু হওয়ার পর কোন শ্রমিক অসন্তোষ আমাদের নজরে আসেনি।’
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে পাট রফতানি আয় ও লক্ষ্যমাত্রা দুটোই কমেছে। এই সময়ে রফতানি আয় এসেছে ৭৯ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬ কোটি ডলার। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) মহাসচিব প্রণব চক্রবর্তী জনকণ্ঠকে বলেন, পাট পণ্য রফতানিতে জাহাজ ভাড়া ১০ গুণ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাজারে পাটের দামও এবার বেশি। প্রতি মণ তিন-সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। এ কারণে আমাদের রফতানিকারকরা এ খাতের পণ্য রফতানি থেকে খুব একটা লাভ পাচ্ছেন না। রফতানিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন, তাই রফতানিও কমছে।
জাতীয় পাট দিবস আজ ॥ পাটজাত বহুমুখী পণ্যকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় পাট দিবস-২০২২। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ-পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ’। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, সোনালি আঁশ হিসেবে খ্যাত পাটের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি গভীরভাবে জড়িত। এ দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পাট ও পাটজাত পণ্য দেশে যেমন গুরুত্বের দাবিদার, তেমনি বিশ্ব বাজারেও এটি একটি অনন্য পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে সমাদৃত। কৃত্রিম তন্তুর পরিবর্তে পাটের ব্যবহার পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট এখনও দেশের ২য় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। শুধু তাই নয়, বাঙালীর অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস। শেখ হাসিনা বলেন, পাটের সঙ্গে রয়েছে এদেশের মানুষ আর আমাদের মহান স্বাধীনতার এক নিবিড় যোগসূত্র। দেশ বিভাগের পর থেকেই তৎকালীন পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী দেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হতে অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার ন্যায্য হিসাব থেকে বঞ্চিত করে।
এছাড়া পাট খাতের উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম, পাটবীজ আমদানিতে নির্ভরশীলতা হ্রাস, পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন, প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বাড়ানোর মতো কার্যক্রম নেয়ার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ বছর পাট দিবসে ১১টি ক্যাটাগরিতে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও পাট সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ৭টি শুভেচ্ছা স্মারক দেয়া হবে।