নিউজ ডেস্ক:
করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে বৈদেশিক সহায়তায় ঋণছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। সাত মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৪৬৯ দশমিক শূন্য ৯৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৯ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে)।
গত অর্থবছরে একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ৩৩৫ দশমিক ৭ কোটি ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ১৩৪ কোটি ডলার বাড়তি অর্থছাড় হয়েছে। একই সময়ে বিশ্বব্যাংকে ছাড়িয়ে গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় শীর্ষে থাকা সংস্থা বিশ্বব্যাংক এখন তৃতীয় স্থানে।
একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪৬৯ দশমিক ৮১ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে)। গত অর্থবছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ২৪৬ দশমিক ৪৭ কোটি ডলার।
ফলে এক বছরের ব্যবধানে বাড়তি প্রতিশ্রুতি এসেছে ২২৩ দশমিক ৩৪ কোটি ডলারের। এ সময়ে সব থেকে বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে চীনের কাছ থেকে। তবে ভারত ও রাশিয়ার কাছ থেকে চলতি বছরের সাত মাসে কোনো ঋণ প্রতিশ্রুতি আসেনি।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জানুয়ারি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুযায়ী, অর্থছাড়ে এগিয়ে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি এ সময়ে ঋণছাড় করেছে ১৭৭ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। এরপরই জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অবস্থান। এ সময়ে সংস্থাটি অর্থছাড় করেছে ১০১ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৮ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। চলতি বছরের সাত মাসে দেশটি ৪৯ দশমিক ৭৪ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে। প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় চার হাজার ২২৭ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক ৪৬ দশমিক ১৫ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে। রাশিয়া ঋণ ছাড় করেছে ৩৮ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা।
এছাড়া এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ৩ দশমিক ১৩, ভারত ৯ এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগি ৪৪ দশমিক ৯৬ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড়ে এগিয়ে ছিল জাপান ও আমেরিকা। দেশ দুটি ৭৮৭ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছিল। এরপরই অর্থছাড় করেছিল বিশ্বব্যাংক ৭৪, এডিবি ৫৭, ইউরোপ ৪৫, জাতিসংঘ ৩ দশমিক ৭ কোটি ডলার।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত সাত মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪৬৯ দশমিক ৮১ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি ছিল চীনের কাছে ১১২ দশমিক ৭ কোটি ডলার। এর পরেই এডিবির কাছ থেকে ৮২ দশমিক ২৮ কোটি ডলার। ঋণ প্রতিশ্রুতির তালিকায় ছিল এআইআইবির ৫১ কোটি, জাপানের ৩৮ কোটি এবং বিশ্বব্যাংকের ৭৯ দশমিক ৫ কোটি ডলার। অর্থছাড় করলেও ভারত ও রাশিয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না।
গত অর্থবছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ২৪৬ দশমিক ৪৭ কোটি ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতির শীর্ষে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, সংস্থাটি ৪৬ দশমিক ৫ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পরেই বিশ্বব্যাংক, সংস্থাটি ৪০ দশমিক ৮ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ইউরোপ ৪০ দশমিক ৪৬, আমেরিকা-জাপান ৩৮, জাতিসংঘ থেকে ১১ দশমিক ৭ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি এসেছিল।
অর্থনীতিবিদদের দাবি, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে চীন ও রাশিয়ার অর্থায়নে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি ভালো বলেই বেড়েছে অর্থছাড়। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণকাজ চলমান। এর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ সহায়তা ৪ হাজার ৪৬১ দশমিক ২৩ কোটি টাকা এবং চীন সরকারের অর্থ সহায়তা ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা।
চীনের অর্থায়নে পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ ও পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ২১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা ঋণ দেবে চীন।
এছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পে বড় ঋণ দিচ্ছে জাপান। পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পও চলমান। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো।
সরকার আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছিল। তবে অনেক প্রকল্পে সব টাকা ব্যয় হচ্ছে না ফলে সংশোধিত এডিপি বা চূড়ান্ত বরাদ্দে কমছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা।
ফলে দুই লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা চূড়ান্তভাবে উন্নয়ন বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার। এক হাজার ৭৫৪ প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় হবে। মোট বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্য থেকে দেশীয় অর্থায়ন এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি বৈদেশিক ঋণ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।