নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীতে মার্কেট-কেন্দ্রিক ও এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর হচ্ছে পুলিশ। এক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছেন না খোদ পুলিশ সদস্যরাও। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সদ্যসমাপ্ত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় নিজের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, কিছু পুলিশ কর্মকর্তা স্থানীয় বিভিন্ন মার্কেট এবং ব্যবসায়ী নেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ ও মাসোহারা নেন। একই সঙ্গে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য চাঁদাবাজি কমলেও এলাকাভিত্তিক ভবন নির্মাণ, জমি ভরাট, কিংবা বিভিন্ন উৎসবকেন্দ্রিক বেড়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কৌশলী চাঁদাবাজি। কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, স্বয়ং কমিশনারের কাছে পুলিশ সদস্যদের সম্পর্কে আসা কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং তার নেতৃত্বাধীন বিশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে রীতিমতো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে বাড়ি চলে যেতে হবে। গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির অধিকর্তা মোহা. শফিকুল ইসলাম তার নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং নগরবাসীর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে একান্ত আলাপনে মেতে ওঠেন কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে। সেখানে তার সহজ-সরল স্বীকারোক্তি ছিল- নগরবাসীর যতটা প্রত্যাশা ছিল, আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও হয়তো সে অনুযায়ী প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। তবে প্রত্যাশা পূরণের সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাত্র ৩২ হাজার পুলিশ সদস্য দিয়ে ২ কোটি নাগরিকের সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। যদি নগরবাসী তথ্য দিয়ে সহায়তা করে তাহলে সম্ভব। ডিএমপির ৪৭ বছরে বড় অর্জন প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, জঙ্গি দমন সবচেয়ে বড় অর্জন। কেননা, জঙ্গি দমন নিয়ে কোথাও কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তাছাড়া খেলাসহ আন্তর্জাতিক যত ইভেন্ট হয়েছে, শৃঙ্খলার সঙ্গে সব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে পেরেছি। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। অপরাধ সংঘটিত হলে এর রহস্য উদ্ঘাটনে আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি সফলতা রয়েছে। ঘটনা ঘটার সপ্তাহ খানেকের ভিতরেই আমরা এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি। ডিএমপির সদস্যদের মাদক থেকে নিবৃত্ত করতে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, মাদকসেবনের কারণে ডিএমপিতে কর্মরত কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক পদমর্যাদার ১১৩ জন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে ১০৬ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাকি সাতজনের বিষয়টি আপিল পর্যায়ে রয়েছে। ডিজিটাল প্রতারণা রোধে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে কমিশনার বলেন, সক্ষমতা আরও বাড়াতে ডিবিতে একটি ল্যাব তৈরি করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকবে এ ল্যাবে। এতে সহজে অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হবে। একটি তথ্য পেলেই তা দিয়ে সহজে অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পোশাকের ছেঁড়া কোনো অংশ, কোনো কাগজের টুকরো, মোটরসাইকেলের নম্বরপ্লেট কিংবা এরকম কোনো অংশবিশেষ দিয়ে সহজে একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এবং ওই অপরাধী দেশের কোন কোন জায়গায় কী ধরনের অপরাধ কর্ম করেছে, তাও বেরিয়ে আসবে। তবে এ ল্যাব প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই এটি করা হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মহানগরীর ১০০ জায়গায় সিসিটিভি বসানো হয়েছে, আরও শতাধিক জায়গায় বসানো হবে। এতে করে কেউ অপরাধ করে সহজে পার পেয়ে যেতে পারবে না। তখন ছিনতাইকারী ছিনতাই করে পালানোর সময় সিসিটিভি সংকেত দেবে। ডিএমপিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে ৫৪ শতাংশ পথচারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানীর ফুটপাথ, ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে হাঁটার সুযোগ নেই। এগুলো কারও না কারও দখলে থাকে। ট্রাফিক সিগন্যালের সিস্টেম ডিএমপির এখতিয়ারের বাইরে। প্রতিদিন ৩০০-এর কাছাকাছি যানবাহন ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে। আবার প্রতিটি রাস্তায় কম-বেশি উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এতেও যানজট হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করছি। থানা পুলিশ মামলা না নেওয়া প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, থানায় জিডি, মামলা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কিংবা সেবা নিতে যাওয়া ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ডিএমপি হেড কোয়ার্টার্স থেকে কল করা হয়েছে। মামলা করতে গিয়ে কোনো হয়রানি শিকার হয়েছেন কি না, থানা পুলিশ মামলা নিতে গড়িমশি করেছে কি না- এসব তাদের কাছ থেকে জানা হয়েছে। এসব কারণে এসআই থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।