সোমবার , নভেম্বর ১৮ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / বাঙালীর পাতে ফিরতে শুরু করেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

বাঙালীর পাতে ফিরতে শুরু করেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

নিউজ ডেস্ক:

  • হারিয়ে যাওয়া মাছ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ
  • জিন ব্যাংকে ৮৮ প্রজাতি
  • প্রজনন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ৩১ প্রজাতির

 মাছে ভাতে বাঙালী কথাটা নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছিল। মৎস্য বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় বাঙালীর পুরনো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই অনেক মাছের নামই জানে না। প্রাকৃতিক জলাশয় কমে যাওয়ায় অনেক দেশীয় মাছের প্রজাতির বিলুপ্তি হয়েছে। যার ফলে বিদেশী মাছের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। তবে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত চেষ্টায় বাঙালীর পাতে আবার ফিরতে শুরু করেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। প্রজনন ও সংরক্ষণ করে বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করে দেশীয় জাতের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। লাইভ জিন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশীয় সব প্রজাতির মাছ সংরক্ষণের কার্যক্রম চলছে। দেশে মিঠা পানির ২৬০টি প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় মাছের সংখ্যা ৬৪টি। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) হতে বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মাছের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে ইতোমধ্যে ৩১ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির আরও ৮ থেকে ৯টি মাছকে ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষণা চলছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণে প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহে ‘লাইভ জিন’ ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। ময়মনসিংহে অবস্থিত এই জিন ব্যাংকে ইতোমধ্যে ৮৮ প্রজাতির মাছের জিন সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। 

সরকারের কার্যকর উদ্যোগের ফলে হারিয়ে যাওয়া নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ আবার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। নদ-নদী, হাওড় ও বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারে একটি অন্যতম সাফল্য। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে পুকুরে দেশীয় ছোট মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৬৭,৩৪০ মেঃ টন -যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২.৫০ লক্ষ মেঃ টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২ বছরে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ।

দেশের মৎস্য উৎপাদনে দেশীয় ছোট মাছের অবদান ৩০-৩৫%। দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হ্যাচারিতে দেশীয় মাছের পোনা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। পোনা প্রাপ্তি সহজতর হওয়ায় বর্তমানে মাঠপর্যায়ে পাবদা, গুলশা, শিং, টেংরা, মাগুর ও কৈ মাছ ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। ইদানীং বাটা মাছের চাষ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে সরকার কাজ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে ৩১ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। আরও বেশকিছু প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন নিয়ে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা চলমান রয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের চাষ প্রযুক্তি আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। দেশীয় মাছ সংরক্ষণে প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহে ‘লাইভ জিন’ ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। ময়মনসিংহে অবস্থিত এই জিন ব্যাংকে ইতোমধ্যে ৮৮ প্রজাতির মাছের জিন সংরক্ষণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশীয় সব মাছকে এ ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। দেশীয় মাছের প্রজাতি সংরক্ষণে এ লাইভ জিন ব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কোন অঞ্চলে কোন প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেলে জিন ব্যাংক থেকে সে অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া মাছ আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। সরকারের কার্যকর উদ্যোগের ফলে হারিয়ে যাওয়া নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ আবার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা মাছে ভাতে বাঙালীর পুরনো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। এ লক্ষ্য নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দফতর-সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা কার্যক্রম সাম্প্রতিককালে জোরদার করা হয়েছে এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে গবেষণা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দেশীয় মাছকে পুনরুদ্ধার করার জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ইতোমধ্যে দেশীয় ছোট মাছ সুরক্ষাসহ গবেষণায় গৌরবজনক ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২০ সালে একুশে পদক অর্জন করে। প্রাচীনকাল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ আমাদের সহজলভ্য পুষ্টির অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এরমধ্যে মলা, ঢেলা, পুঁটি, বাইম, টেংরা, খলিশা, পাবদা, শিং, মাগুর, কেচকি, চান্দা ইত্যাদি অন্যতম। এসব মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এসব উপাদান শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং রক্তশূন্যতা, গলগ-, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সঙ্কোচন, অতিআহরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছোট মাছের প্রাপ্যতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়।

আইইউএন এর তথ্যমতে দেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের সংখ্যা ৬৪টি। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) হতে বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মাছের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে ইতোমধ্যে ৩১ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এরমধ্যে পাবদা, গুলশা, টেংরা, গুজি আইর, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালী, বালাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা, গজার, রাণী, বাতাসী, পিয়ালী ইত্যাদি অন্যতম। এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হওয়ায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের প্রাপ্যতা সাম্প্রতিকালে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাছের মূল্য সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এসেছে। তাছাড়া, নদ-নদী, হাওড় ও বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে পুকুরে দেশীয় ছোট মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৬৭,৩৪০ মেঃ টন -যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২.৫০ লক্ষ মেঃ টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১১ বছরে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ।

বর্তমান সরকারের আমলে দেশীয় মাছ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ইতোপূর্বে শুধুমাত্র ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করা হতো। বর্তমানে ময়মনসিংহ স্বাদুপানি কেন্দ্র ছাড়াও বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ এর আমলে বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার ফলে এ সফলতা অর্জিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইনস্টিটিউট হতে উদ্ভাবিত কয়েকটি দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষ কৌশল নি¤েœ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো ঃ বিপন্ন প্রজাতির টেংরা মাছের কৃত্রিম প্রজনন ঃ আইইউসিএন এর তথ্যানুযায়ী টেংরা বর্তমানে একটি বিপন্ন প্রজাতির মাছ। প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার্থে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, সৈয়দপুরে এর কৃত্রিম প্রজনন, পোনা প্রতিপালন এবং চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মৎস্য অধিদফতরে ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বৈরালি মাছের জিনপুল সংরক্ষণ ॥ বৈরালি মাছ উত্তর জনপদের একটি সুস্বাদু মাছ। খাল, বিল, পাহাড়ী ঝর্ণা ও অগভীর স্বচ্ছ নদীতে মূলত ঃ এ মাছটি পাওয়া যায়। আইইউসিএন কর্তৃক এ মাছটিকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিপন্নের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্র কর্তৃক রংপুরের চিকলি নদী ও দিনাজপুরের আত্রাই নদী হতে বরালি মাছ সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রতিপালন করা হয়।

বালাচাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন ॥ বালাচাটা মাছ অঞ্চলভেদে মুখরোচ, পাহাড়ী গুতুম, গঙ্গা সাগর, ঘর পইয়া, পুইয়া, বাঘা, বাঘা গুতুম, তেলকুপি ইত্যাদি নামে পরিচিত। তবে উত্তর জনপদে মাছটি বালাচাটা, পুইয়া এবং পাহাড়ী গুতুম নামে অধিক পরিচিত। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ মাছটি এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। বর্তমানে এ মাছটি সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়। পাহাড়ী ঝর্ণা ও অগভীর স্বচ্ছ জলাশয় এদের বেশি প্রিয়। গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা ঃ গুতুম মাছ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানে নদী অববাহিকায়, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি জলাশয়ে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে উত্তরবঙ্গের চলন বিল, ছোট যমুনা নদী ও হালতি বিলে এ মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, দিনাজপুর এবং রংপুরের ছোট ছোট নদীতে এ মাছ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। খলিশা মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন ঃ খলিশা বাংলাদেশের অতি পরিচিত দেশীয় প্রজাতির একটি ছোট মাছ। আমাদের দেশে খৈলশা, খলিশা, খৈইলা নামে পরিচিত। প্রাকৃতিকভাবে এ প্রজাতিটি বাংলাদেশসহ, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে মূলত ঃ পাওয়া যায়। মিঠাপানির জলাশয়ে বিশেষ করে পুকুর, নদী, ঝর্ণা, খাল, বিলে একসময় এ মাছটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। শস্য খেতে কীটনাশকের যথেচ্ছা প্রয়োগ, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা, কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বাসস্থান ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় এ মাছের প্রাচুর্যতা সাম্প্রতিককালে ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।

কুচিয়ার পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা ॥ কুচিয়া অন্যতম পুষ্টি সমৃদ্ধ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি মাছ। আন্তর্জাতিকবাজারে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিগত কয়েকবছর যাবত কুচিয়া রফতানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। মূলত ঃ প্রকৃতি থেকে কুচিয়া সংগ্রহ করে বিদেশে রফতানি করা হয়। কুচিয়াও বর্তমানে ১টি বিপন্নপ্রায় প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। আন্তর্জাতিক বাজারে কুচিয়ার যথেষ্ট চাহিদা থাকায় কুচিয়ার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

জাইত পুঁটি মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন ॥ জাইত পুঁটি স্বাদুপানির একটি সুস্বাদু ও গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় ছোট মাছ। এক সময় এ মাছটি দেশের বিল, পুকুর, নদী-নালা, খালবিল, প্লাবনভূমি, হাওড়, সর্বত্র পাওয়া যেত এবং খাদ্য তালিকায় এটি খুব পছন্দের মাছ ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে জলাশয় দূষণের ফলে এ পুঁটি মাছের উৎপাদন বর্তমানে কমে গেছে। ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি কেন্দ্রে ২০২০ সালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ পুঁটি মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়েছে।

গজার মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন ॥ গজার মাছ প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে গজার মাছকে সুরক্ষা করার লক্ষ্যে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে গজার মাছ সংগ্রহ করে বিএফআরআই এর ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রের পুকুরে লালন-পালন করে ব্রুড মাছ প্রস্তুত করা হয়। এপ্রিল-জুন মাস হচ্ছে গজারের প্রজনন ঋতু। প্রজনন ঋতুতে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পোনা তৈরির জন্য স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে পুকুরে রাখা হয়। প্রজননকালে আশ্রয় নেয়া কিংবা ডিম দেয়ার জন্য পুকুরে কচুরিপানা, টোপাপানা ও শুকনো ডালপালা দেয়া হয়। এতে ১৫-২০ দিন পর কচুরিপানা/টোপাপানার নিচে গজারের রেণু লক্ষ্য করা যায়। সেখান থেকে রেণু সংগ্রহ করে নার্সারি পুকুরে মজুদ করা হয় এবং পোনা তৈরি করা হয়।

পিয়ালী মাছের প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ॥ যমুনা ও পদ্মা নদী বিধৌত এলাকায় বসবাসরত মানুষের কাছে পিয়ালী মাছ অতি পরিচিত। এর স্বাদ মানুষের মুখে মুখে। একসময় যমুনা ও পদ্মা নদীতে পিয়ালী মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয় ও অতি আহরণের ফলে এ মাছও বর্তমানে সঙ্কটাপন্ন মাছের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে পিয়ালী মাছকে প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বগুড়া জেলার সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণা পরিচালনা করে দেশে প্রথমবারের মতো এর প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এর পোনা প্রাপ্তি এখন সহজতর হবে এবং চাষের আওতায় আনা যাবে।

পিয়ালী মাছ এলাকাভেদে জয়া, পিয়ালী বা পিয়াসী নামে পরিচিত। বাংলাদেশ (পদ্মা ও যমুনা এবং তাদের শাখা নদীতে), ভারত (আসাম, উত্তরাঞ্চল, উত্তর প্রদেশ), নেপাল, ইরান, মায়ানমার, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও আফগানিস্তানে এই মাছের বিস্তৃতি রয়েছে।

রাণী মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন ॥ দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে রাণী মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। স্বাদুপানির বিলুপ্তপ্রায় ছোট মাছের মধ্যে রাণী মাছ অন্যতম। এ মাছটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ভুটান ও মায়ানমারে এ মাছ পাওয়া যায়। রাণী বা বউ নামে পরিচিত হলেও অঞ্চলভেদে এ মাছটিকে বেটি, পুতুল ও বেতাঙ্গী নামেও ডাকা হয়।

আরও দেখুন

নাটোরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে প্রাইভেট শিক্ষকের যাবজ্জীবন জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,,,, নাটোরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে প্রাইভেট শিক্ষক হযরত আলী (৪২)’র যাবজ্জীবন জেল ৫০ হাজার …