নিউজ ডেস্ক:
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় দেন। মাঝে মাঝেই বাংলায় আবেদন দাখিল করেন কোনো কোনো আইনজীবী। শুনানিতে এখন বাংলার ব্যবহার খুব বেশি। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের উভয় (আপিল ও হাই কোর্ট) বিভাগের বিচারপতিদের দেওয়া ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে অনুবাদ করা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে এ এক বছরে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল প্রায় ১০০টি ইংরেজি রায় বাংলায় রূপান্তর করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংবলিত ‘আমার ভাষা’ নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে। উচ্চ আদালতের ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলছেন আইনজীবীরা। তবে উদ্যোগটি পুরোপুরি সফল করতে হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তারা। রায় অনুবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র পাঁচ সদস্যের টিম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল কাজ করলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ রায় অনুবাদ করা সম্ভব হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মেয়াদ-সংক্রান্ত ‘আতাউর মৃধা বনাম রাষ্ট্র’ মামলার রায়টিও আমরা অনুবাদ করেছি। শিগগিরই এটা ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায় অনুবাদ করা হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক গ্রন্থের কাজেও ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারের সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সবাই দায়িত্বশীল হলে উদ্যোগটি সফল হবে : রায় অনুবাদের কার্যক্রমটি প্রশংসনীয় বলেছেন আইনজীবীরা। তবে এ উদ্যোগটি পুরোপুরি সফল করতে হলে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, আইনজীবী, বেঞ্চ সহকারী যারা আছেন, তারা দীর্ঘদিন একটি কাঠামোর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় কাজ করে আসছেন। তাই চাইলেই খুব দ্রুত উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার পুরোপুরি চালু করা সম্ভব নয়। তবে সুপ্রিম কোর্ট সাম্প্রতিক সময়ে সফটওয়্যার ব্যবহার করে রায় অনুবাদ শুরু করেছে। এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষাগত সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালতের অধিকাংশ রায় ও আদেশ ইংরেজিতে দেওয়া হয়। দেশের একটি বড় অংশের মানুষই ইংরেজি বুঝতে পারেন না। তাই সফটওয়্যার ব্যবহার করে রায় অনুবাদের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তবে এটা লোকদেখানো হলে হবে না, সাধারণ মানুষ যেন আসলেই উপকৃত হয় সেভাবেই কাজ করতে হবে। রায় প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদেরও অনুবাদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।