নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রীয় দরপত্রে দেশীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সরকারি প্রকল্পগুলোতে বিদেশি কোম্পানির কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগী হিসাবে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত রাখার শর্ত দেওয়া যায় কি না, সেই প্রস্তাব রাখা হয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে।
‘সরকারি ক্রয়ে আরও অধিক দরদাতার অংশগ্রহণ, বিশেষ করে দেশি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে’ আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির করা ১১টি সুপারিশ বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। এর সঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের চারটি বিশেষ পর্যবেক্ষণও যুক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য গৃহীত হলেও আরও বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন।
সব কাজ ‘বিদেশিদের দেওয়ার প্রবণতা’ থেকে সরকার বেরিয়ে আসতে চায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের ক্যাপাসিটি এখন বেড়েছে। আমরা সব সময় স্থানীয় কন্ট্রাক্টরদের উৎসাহিত করি। স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সক্ষমতা অর্জন করুক সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
“যেগুলো হাইলি টেকনিক্যাল, যেগুলোর জন্য আমাদের এখানে লোকাল কন্ট্রাক্টর তৈরি করতে পারিনি, সেখানে বিদেশিদের অনুমোদন দেব। তবে বিদেশি যারা কাজ পাবে, তারা আমাদের লোকাল কোনো বিজনেস হাউজকে পার্টনার করে কাজটি করবে। তাতে আমাদের লোকাল বিজনেস হাউজগুলো সুযোগ পাবে এবং আগামী দিনগুলোতে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেরাই কাজটি এককভাবে করতে পারবে।”
বৈঠকে কতটা অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “লোকাল কন্ট্রাক্টরদের কীভাবে সুযোগ করে দেওয়া যায় সেটাই আলোচনা হয়েছে। যেখানে বিদেশিদের না নিলেও পারি সেখানে নিজেরা করতে পারি কিনা, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
সরকারি দরপত্রে দেশীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে এতোদিন জোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন দেশীয় ঠিকাদাররা। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেশীয় কোম্পানিগুলোর ‘যথেষ্ট দক্ষতা’ থাকার পরও জটিল সব শর্তের কারণে তারা দরপত্রে অংশ নিতে পারছিল না বলে অভিযোগ ছিল।
সিনেসিস আইটির সিইও রুপায়ন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশীয় শিল্পের জন্য তা খুবই সুফল বয়ে আনবে। বিশেষ করে আইটি খাতে, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে, দেশীয় কর্মসংস্থানের বিষয়ে একটি ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।”
সরকারি চাহিদা পূরণ করার মত ‘যথেষ্ট প্রতিষ্ঠান’ এখন দেশের আইটি খাতে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “প্রকল্প পরিচালকরা ঝুঁকি এড়াতে অনেক সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়। এখন সরকারি সিদ্ধান্ত হলে হয়ত তেমন আর হবে না। তারা শর্তের বিষয়ে শিথিল হবে।”
মন্ত্রিপরিশোধ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সচিবকে প্রধান এবং আইএমইডির সচিবকে সদস্য সচিব করে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছিল।
সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, এলজিআরডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীরা কমিটির সদস্য ছিলেন। কমিটি এ বিষয়ে ১১টি সুপারিশ করেছিল, সেগুলোই ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হয়।
“পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানও চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে “
আর যা আছে প্রস্তাবে
একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশীয় সরবরাহকারী ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে পণ্য ও কাজ সংগ্রহ করা সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের ভেতরে দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগটি শুধু দেশীয় দরদাতাদের মধ্যে সীমিত রাখা যেতে পারে।
পণ্য বা সেবা কেনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হলে বাধ্যতামূলকভাবে আন্তর্জাতিক দরদাতাকে কোনো দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বে আসার কথা রয়েছে আরেকটি প্রস্তাবে।
দেশীয় দরদাতাদের অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত কাজ সহঠিকাদারের (সাব কন্ট্রাক্ট) মাধ্যমে বাস্তবায়নের সুযোগ রাখার সুপারিশও এর মধ্যে রয়েছে।
আরেকটি প্রস্তাব হল, দেশের ভেতরে ক্রয়কাজে দরপত্র ডাকার সময়ই ব্যয়ের প্রাক্কলন প্রকাশ করতে হবে। যে দপ্তর থেকে প্রাক্কলন করা হবে, তাও প্রকাশ করতে হবে।
এসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও কোনোটিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্ত
ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এদিন ওয়েস্টার্ন ইকনোমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সম্যান্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পের প্রথম পর্বের পরামর্শক সেবার কাজ কোরিয়ার ডিওএইচডব্লিউএ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টের জয়েন্টভেঞ্চারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৫৯ কোটি ৭৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৪০ টাকায় তারা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ প্রকল্পে পরামর্শ সেবা দেবে।
এছাড়া কৃষিমন্ত্রণালয়ের একটি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাবে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার ১৮২ কোটি ৬ লাখ ২ হাজার ৮৭৫ টাকায়, ২৫ হাজার টন রক ফসফেট সার ৭৮ কোটি ৫২ লাখ ৬ হাজার ২৫০ টাকায় এবং ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৭২ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮১২ টাকায় কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।