নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। আর এ ইলিশ শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পদ্মার রুপালি ইলিশের চকচকে ছবি। রসনায় ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ইলিশ বাংলাদেশের মৎস্য খাতের অন্যতম ফসল। ইলিশ উৎপাদনের সর্বশেষ তথ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়-বর্তমানে বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশের সর্বোচ্চ আহরণমাত্রা সাত লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে আহরিত (৫.৫০ লাখ মে. টন) ইলিশের চেয়ে ১.৫০ লাখ মে. টন বেশি। অর্থাৎ বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে আরও ১.৫ লাখ মে. টন অতিরিক্ত ইলিশ সহনশীল মাত্রায় আহরণ করা যাবে। একইসঙ্গে ইলিশের মজুদ (Standing Biomasss) নিরূপণ করা হয়েছে তিন লাখ ৯৯ হাজার মে. টন। ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিএফআরআই থেকে পর পর দুই বছর (২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০) বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, মুন্সীগঞ্জ ও রাজশাহীর বিভিন্ন নদন্ডনদী ও সমুদ্রের ১২টি নমুনা স্থান থেকে লক্ষাধিক ইলিশ মাছের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে ৩৪-৩৬ সে.মি. আকারের ইলিশ এবং এদের অবদান ১৫-১৯%। অপরদিকে, সমুদ্রে ৩২-৩৪ সে.মি. সাইজের ইলিশ সর্বোচ্চ ২২% অবদান রেখেছে। এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ইলিশের সর্বোচ্চ সহনশীল উৎপাদন প্রতিবছরের বিদ্যমান মজুদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মজুদ কম-বেশি হলে আহরণমাত্রাতে পরিবর্তন হতে পারে। ইলিশ মাছের মজুদ জলাশয়ের গতি-প্রকৃতি, আহরণমাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সূত্রমতে, প্রতিবেদনে গবেষকগণ কতিপয় সুপারিশ প্রদান করেছেন। এগুলোর মধ্যে প্রধান প্রধান সুপারিশসমূহ হচ্ছে- বর্তমান মজুদের বিপরীতে দেশের নদ-নদী ও সাগর থেকে আগামী দুই-তিন বছর পর্যন্ত প্রতিবছর সাত লাখ মে. টনের বেশি ইলিশ আহরণ না করা, প্রতিটি ইলিশকে জীবনচক্রে কমপক্ষে একবার ডিম ছাড়ার সুযোগ দেওয়া, ইলিশের আহরণমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বজায় রাখার লক্ষ্যে ইলিশ ধরা জালের ফাঁসের আকার, নৌকার আকার, ধারণক্ষমতা ও নৌকাপ্রতি জনবলের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং ইলিশের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্রকে দূষণের হাত থেকে সুরক্ষা করা।