নিউজ ডেস্ক:
উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করাসহ পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীর জন্য আলাদা একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বাহিনীটিকে শক্তিশালী ও বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ এর পঞ্চম ও শেষদিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কথা বলেন। এসময় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আইজিপি পদকে ফোর স্টার জেনারেলে রূপান্তর করা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকেই পুলিশের জন্য আরেকটি অধিদফতরের দাবি জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৮২ হাজার জনবল পুলিশে আমরা বৃদ্ধি করেছি। নতুন ইউনিট হিসেবে নৌপুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, পিবিআই, সিটিটিসি ও এটিইউসহ যখন যেটা প্রয়োজন ছিল তখন আমরা ঢেলে সাজিয়েছি। পুলিশের দাবি-দাওয়াগুলো অধিকাংশই যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যৌক্তিক দাবি-দাওয়া আলোচনার মাধ্যমে দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যা যা প্রয়োজন আমরা সবকিছুই করব। এছাড়াও অন্যান্য দাবি-দাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দেশের পুলিশ কর্মকর্তারা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তারা আরও সুন্দরভাবে কাজ করবেন। পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে জঙ্গি দমন, সন্ত্রাস দমনে বিশ্বে মডেল হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, র্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিএনপির সময়ে। বিগত দিনগুলোতে কী হয়েছিল তা ঘাটতে চাই না। ঘাটতে গেলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। বর্তমান সরকারের সময়ে র্যাব যে সমস্ত কর্মকাÐ করেছে সেগুলো মানুষের মুখে মুখে রয়েছে। র্যাবের সফলতার জন্য আমরা অনেককিছু কন্ট্রোল করতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমাদের সময় র্যাব জনগণের পাশে থেকে সেবা দিয়েছে। শুরু থেকেই জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূল, সন্ত্রাস দমন, জলদস্যু নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল দ্রব্য নিয়ন্ত্রণসহ চরমপন্থি নিয়ন্ত্রণের মতো সবগুলো ক্ষেত্রেই র্যাব অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আজ জনগণ র্যাবকে আস্থার প্রতীক মনে করে। যেখানেই অসম্ভব, র্যাব সেখানে আলো ছড়িয়েছে। র্যাব শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে।
জঙ্গি দমনে র্যাবের সফলতা চোখে পড়ার মতো জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে জঙ্গি সারা বিশ্বে যখন তছনছ করে দিয়েছিল, তখন আমাদের দেশে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে র্যাবও অগ্রণী ভ‚মিকা নিয়েছিল। তিনি বলেন, আপনারা জানেন জঙ্গিদের অভিভাবকরা র্যাবের কাছে এসে তাদের সন্তানদের ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। এসব কর্মকাÐে র্যাব জনগণের প্রতি আস্থা তৈরি করেছে। সেখানে আজকে র্যাবের বিরুদ্ধে কেনইবা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, এগুলো আমরা দেখছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। দেশে শান্তির যে সুবাতাস বইছে, সেখানে তাদের (র্যাবের) ভ‚মিকা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সভাপতির বক্তব্যে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেশে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায়, আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকায় শিল্পায়ন ও নগরায়ন হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। দেশে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। জঙ্গি সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি সম্পর্কে আইজিপি বলেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের মহাকাব্যিক অর্জন হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের জন্য অর্থ বরাদ্দ ‘ব্যয় নয়, বিনিয়োগ।’ কারণ পুলিশের সক্ষমতা বাড়লে, পুলিশ উন্নত ও আধুনিক হলে এর সুফল ভোগ করবে দেশ ও দেশের জনগণ। পুলিশের অতিরিক্ত আইজি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপার সভায় উপস্থিত ছিলেন।