রোববার দুপুর দেড়টা। বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ শুরু হতে তখন বাকি মাত্র আধাঘন্টা। অথচ সেই সময়ে উপজেলা পর্যায় থেকে আসা ৪০ থেকে ৫০ জন বিএনপির কর্মীর দখলে সমাবেশ মঞ্চ। চলছে ফটোসেশন ও সেলফি তোলার হিড়িক। মঞ্চের সামনে পুরোপুরি ফাঁকা। সেখানে ছাতা মাথায় পায়চারি করছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আর শফিকুল হক মিলন।
তাদের সঙ্গে নেই মহানগর কমিটির কোনো নেতাও। থেমে থেমে মাইকে অনুনয় বিনয় করে ঘোষণা চলছে- ‘প্রিয় রাজশাহীবাসী, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে আপনারা কী একমত নন! যদি একমত হন, তবে বিএনপির সমাবেশকে সফল করতে দলে দলে যোগদান করুন।’
তবে তাদের সেই অনুনয়-বিনয়ে শেষ পর্যন্ত সাড়া দেয়নি রাজশাহীর মানুষ। খোদ দলীয় নেতাকর্মীরা আসেনি সমাবেশে। রাজশাহীর বিভাগের আট জেলা থেকে সমাবেশে আসেন সামান্য কিছু নেতাকর্মী। ফলে কথিত ওই মহাসমাবেশের নগন্য উপস্থিতি নিয়ে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের মাঝে। বিএনপি নেতারা বলছেন- দলের অর্ন্তকোন্দলের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ক্রমেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির ঘোষণার পর থেকে মিজানুর রহমান মিনু ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। ওই কমিটিতে মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ থেকে মিনুকে সরিয়ে বুলবুলকে সভাপতি করা হয়। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন মহানগর বিএনপির কার্যালয় তালা ঝুলিয়ে রাখে মিনুর অনুসারীরা। এছাড়া সিটি নির্বাচনে বুলবুলের পক্ষে কাজ করেন নি মিনুর অনুসারীরা।
আবার সংসদ নির্বাচনে মিনুর পক্ষেও মাঠে নামেনি বুলবুলের অনুসারীরা। দুই নেতার বিরোধের কারণে তাদের ভরাডুবি হয়। তবুও শিক্ষা নেননি তারা। এছাড়া আবু সাঈদ চাঁদ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ায় ক্ষুব্ধ নাদিম মোস্তফা। নাদিম মোস্তফার অনুসারীরা জেলা বিএনপির কোনো প্রকার কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে নামছে না।
নেতাকর্মীরা জানান, মিনু চাননি বুলবুলের সভাপতিত্বে বিভাগীয় এই মহাসমাবেশ সফল হোক। তাই তার অনুসারীদের তোলেন নি। অপরদিকে নাদিম মোস্তফাও চাননি জেলা কমিটির নতুন আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের নেতৃত্বে মহাসমাবেশ সফল হোক। তিনি তার অনুসারীদের সমাবেশে তোলেন নি।
এছাড়া রাজশাহীর সাধারণ মানুষ বলছেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে আজ বিএনপির চরম দুর্দশা। এ অবস্থায় জনগণকে তাদেরকে পছন্দ করছে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বিএনপির সমাবেশ বয়কট করছে।