নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২১’ শীর্ষক উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের এ মহাকাশ সংস্থা আয়োজিত প্রতিযোগিতাটিতে ‘নাসা বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মনোনীত দল ‘টিম মহাকাশ’।
বৈশ্বিক এ প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর ১০টি ক্যাটাগরিতে ১০টি সেরা উদ্ভাবনকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে থাকে সংস্থাটি। এ বছর বিশ্বের ১৬২টি দেশের ৪৫৩৪টি দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
নাসার এ প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্বের আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানায়, বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত ২৭টি প্রকল্প এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয়।
বেসিস ও নাসার ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বাউয়েট) তরুণ শিক্ষার্থীদের ছয় সদস্যের সম্মিলিত টিম মহাকাশ। এর মধ্যে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা হলেন- সুমিত চন্দ, আলভি রওনক, শিশির কৈরি। বাউয়েটের শিক্ষার্থীরা হলেন- বর্ণিতা বসাক তৃষা, সমির ইমতিয়াজ ও মমিনুল হক।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলের সদস্যরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি নাসার বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখার সুযোগ পান। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় বিজয়ীরা সশরীরে এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন।
জানা যায়, টিম মহাকাশের উদ্ভাবিত টুল ‘এআরএসএস-অ্যাডভান্সড রিগোলিথ স্যাম্পলার সিস্টেম’ মূলত ভিনগ্রহে অভিযানের সময় মুক্তভাবে উড়তে থাকা ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণের কাজ করবে। চাঁদে আগের মানব মিশনগুলোতে উপস্থিত ধূলিকণার মধ্যে কাজ করতে নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন নভোচারীরা। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম হওয়ায় সহজেই ধূলিকণা উড়ে ভাসতে থাকে চারপাশে, এর ফলে তাদের নমুনা সংগ্রহে বেগ পেতে হয়। এ ছাড়াও মহাজাগতিক রেডিয়েশনের কারণে আয়নিত হওয়া ধূলিকণা স্পেসস্যুটের গায়ে লেগে থেকে স্যুটের ক্ষতি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে। এ পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবিলায় সক্ষম একটি টুলসেট উদ্ভাবন করেছে ‘টিম মহাকাশ’। ভাসমান ধূলিকণাকে একটি আবদ্ধ চেম্বারে আটকে ফেলবে টুলসেটটি।
নাসার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রসঙ্গে টিম মহাকাশের সুমিত চন্দ বলেন, ‘নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারাটা সবসময় গর্বের। আমরা এমন একটা সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করেছি, যা নিয়ে নাসাসহ পৃথিবীর বড় বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই পৃথিবীর বড় বড় সমস্যার সমাধান বের করে ফেলতে পারেন সেটা আবারও দেখিয়ে দিয়েছি।’ বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। প্রতিযোগিতায় এবারের আসরে বাংলাদেশ পর্বে আট শতাধিক প্রকল্প জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে ১২৫টি প্রকল্পের প্রতিনিধিরা ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী হ্যাকাথনে অংশ নেন এবং সেরা ২৭টি প্রকল্প নাসার জন্যে বাংলাদেশ থেকে মনোনীত করা হয়।
বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের এ অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার আরেকটি দৃষ্টান্ত। বিজয়ীদের প্রয়োজনীয় আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দেব।
এর আগে ২০১৮ সালে ‘বেস্ট ডেটা ইউটিলাইজেশন’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘সাস্ট অলিক’।