নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। বঙ্গভবন থেকে পূর্বে ধারণকৃত রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষণটি সে অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করা হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, দুদক কমিশনার, মো. মোজাম্মেল হক খান (অনুসন্ধান) ও মো. জহুরুল হক (তদন্ত) এবং দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, পারিবারিক, সামাজিক ও আশপাশের পরিবেশই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পূর্বে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে। দুদকের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তা হলেই সমাজে এই দুর্নীতি হ্রাস পাবে। তিনি দুদকের সব পর্যায়ের কর্মীদের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করার আহ্বান জানান। দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে কিছুসংখ্যক লোকের জন্য যাতে পুরো দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন। দুর্নীতিকে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’ তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে দুদককে দুর্নীতি দমনে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে কোনো অনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রলুব্ধ না করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। আবদুল হামিদ বলেন, সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। মানুষের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা তৈরি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেই কেবল দুর্নীতিকে সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। আবদুল হামিদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ দিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মানবিক, বৈষম্যহীন, দারিদ্র্যমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত শুদ্ধাচারী রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ করা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় কখনো দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেননি। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, ‘চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে সামর্থ্যরে সামঞ্জস্য না থাকলেই দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রেখে জীবন ধারণে অভ্যস্ত হলেই সমাজ থেকে দুর্নীতি হ্রাস পাবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের কৌশলও বদলেছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে হলে দুদককেও আরও কৌশলী হতে হবে, প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সংবিধানের আলোকে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে উত্তম চর্চার আলোকে আপনারা সেবা প্রদান অব্যাহত রাখবেন।