নিউজ ডেস্ক:
পাটখাতের উন্নয়নে উন্মুক্ত হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ। পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসা পরিচালনায় বিদেশি নাগরিক বা বিদেশি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ রেখে করা হচ্ছে পাট বিধিমালা। এরই মধ্যে ‘পাট আইন, ২০১৭’ এর অধীনে ‘পাট বিধিমালা, ২০২১’ এর খসড়া করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এখন সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পাট) মো. মুহিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আইন বাস্তবায়নের জন্য তো বিধিমালা করতে হয়। সেভাবেই পাট আইন বাস্তবায়নের জন্য পাট বিধিমালা করা হচ্ছে। আমরা স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিধিমালার খসড়া দাঁড় করিয়েছি। এখন আরও মতামতের জন্য দপ্তর, সংস্থা, বোর্ড, স্টেক হোল্ডার, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এবং সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে মতামত এলে আমরা সেগুলোও লক্ষ্য রাখবো।
বিজ্ঞাপন
পাটখাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আইনটি বাস্তবায়নে বিধিমালাটি সহায়ক হবে বলেও মনে করেন অতিরিক্ত সচিব।
তিনি বলেন, পাটখাতে বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত রাখা হবে। টেলিকম সেক্টরে যেভাবে বিনিয়োগ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, এক্ষেত্রেও সেভাবে থাকবে। বিদেশি বিনিয়োগ এলে পাটখাত আরও এগোবে বলে আমরা মনে করি।
বিজ্ঞাপন
বিধিমালায় বলা হয়েছে, পাট ব্যবসা ও শিল্পের ক্ষেত্রে দেশের জাতীয় স্বার্থে যুক্তিযুক্ত মনে হলে সরকার পুরোপুরি বিদেশি মালিকানাধীন ফার্ম বা কোম্পানিকে যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স দিতে পারবে। তবে যুক্তিযুক্ত বিবেচিত না হলে এমন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। কোনো ফার্ম বা কোম্পানির ৫০ শতাংশ অংশীদারত্ব বাংলাদেশি নাগরিকের বা প্রতিষ্ঠানের থাকলে লাইসেন্স দেওয়া যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিধি লঙ্ঘন করলে বা দেশের জন্য আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিকর বা গ্রহণযোগ্য নয়, পাট ব্যবসায় এমন কোনো কারবার/কর্মকাণ্ড করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিজ্ঞাপন
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সরকার আদেশের মাধ্যমে পাটকাঠি থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যে কোনো বা বিশেষ শ্রেণির পণ্য উৎপাদন, কেনা-বেচা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
এ বিষয়ে প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, পাটকাঠি থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চারকোল বা যে কোনো বা বিশেষ শ্রেণির দ্রব্য বা পণ্য উৎপাদন, কেনা-বেচার জন্য পাট অধিদপ্তরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।
যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবেন পাট অধিদপ্তরের ডিজি
খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও প্রসার, গবেষণা ও পাটচাষে উদ্বুদ্ধ করতে পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) পাটবীজের আমদানিনির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদন, সংরক্ষণের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে চাষিদের সহায়তা দিতে পারবেন। এছাড়া পাট, পাটবীজ ও পাটজাত পণ্য (প্রচলিত ও বহুমুখী) গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে আলাদা ইনস্টিটিউট গঠনের উদ্যোগ নিতে পারবেন।
এতে আরও বলা হয়, প্রচলিত পাটজাত পণ্য এবং বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনে শিল্প কারখানা স্থাপন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে জোনভিত্তিক পাটপল্লী স্থাপনে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
পাটজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাটজাত পণ্য পরীক্ষাগার স্থাপন করতে পারবেন বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়নের শর্ত
পাট আইনে বলা হয়েছে, পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিধি নির্ধারিত পদ্ধতিতে লাইসেন্স নিতে হবে। কোনো পাটচাষিকে তার নিজ উৎপাদিত পাট বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোনো লাইসেন্স নিতে হবে না। তবে তিনি সরাসরি রপ্তানি করতে চাইলে লাইসেন্স নিতে হবে।
এতে বলা হয়- লাইসেন্সধারী কেবল অনুমোদিত ওজনে পাট ব্যবসা করবেন। প্রাকৃতিক আর্দ্রতার চেয়ে অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত পাটের ব্যবসা করবেন না বা পানি, বালি ও রং ইত্যাদি মিশ্রিত পাটের ব্যবসা করবেন না।
কোনো ব্যবসায়ী ‘মণ’ হিসেবে ৩৭ দশমিক ৩২৪২ কেজির বেশি পরিমাণ ওজন গ্রহণ করতে পারবেন না। প্রকৃত পাটচাষি বা লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী নন, এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন বা মধ্যস্থতা করবেন না।
সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্যের নিচে বা সর্বোচ্চ মূল্যের উপরে কোনো পাট বা পাটজাত পণ্য কেনাবেচা করবেন না বা বিক্রি বা কেনার প্রস্তাব দেবেন না বা পাট বা পাটজাত দ্রব্য/পণ্যের কোনো লেনদেনের মধ্যস্থতা করবেন না।
বিধিমালায় আরও বলা হয়, পাটপণ্যের ব্যবসার লাইসেন্সধারী পাট মজুতের বিবরণ ও অবস্থান সম্পর্কে পাট অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়কে মাসিকভিত্তিতে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবেন।
এছাড়া প্রত্যেক প্রস্তুতকারক বা পাটকলকে আবশ্যিকভাবে রপ্তানিকারক লাইসেন্স নেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়া পাট বিধিমালায়।