নিউজ ডেস্ক:
আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালু করবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মোবাইল টেলিকম অপারেটর টেলিটক। শনিবার টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিখাতের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবির সঙ্গে এক কর্মশালায় এ তথ্য দেন টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শাহাব উদ্দিন।
রাজধানীর গুলশান-১ এ বিটিসিএল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে টেলিটকের ফাইভজি চালুর প্রস্তুতির বিষয়ে আয়োজিত এ কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন টেলিটকের মহাবব্যস্থাপক (সেলস অ্যান্ড ডিসট্রিবিউশন) প্রকৌশলী এসকে ওয়াহিদুজ্জামান, টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদী এবং সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
টেলিটকের চলমান কার্যক্রম এবং ফাইভজির প্রস্তুতির বিষয়ে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিটকের কোম্পানি সচিব তারঘীবুল ইসলাম এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) রেজাউল করিম রিজভী।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আগামী ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালু করবে টেলিটক। এ দিন ঢাকায় ছয়টি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশনের (বিটিএস) মাধ্যমে প্রাথমিক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এরপর ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকায় ২০০টি বেস ট্রান্সসিভার স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলবে। বাণিজিক্য পরীক্ষামূলক সময়ের পর ফাইভজির পূর্ণ সেবা কার্যক্রম চালু হবে।
তিনি আরও জানান, ফাইভজি চালুর জন্য এরইমধ্যে টেলিটক তিন হাজার ৫০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৬০ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ পেয়েছে। ফাইভজি প্রকল্পের জন্য টেলিটক দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সরকারের কাছ থেকে। এ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র নীতি অনুসরণ করা হবে।
কর্মশালায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বর্তমানে টেলিটকের পাঁচ হাজার ৪৫১টি টুজি, চার হাজার ৬৬৫টি থ্রিজি এবং তিন হাজার ২৯০টি ফোরজি বিটিএস রয়েছে। প্রবন্ধে তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পুরো বিশ্বেই থ্রিজির ব্যবহার মোট ব্যবহারকারীর পাঁচ শতাংশে নেমে আসবে। তবে ফোরজি আরও এক দশকের বেশি সময় ধরে সাধারণ গ্রাহকের জন্য উপযোগী থাকবে। আর ফোরজি পর্যন্ত মোবাইল টেলিকম সেবায় যে উন্নতর অবস্থায় উন্নীত হয়েছে, তার চিত্র আমূল বদলে দেবে। আর ফাইভজি মূলত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে স্মার্ট শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা এবং ব্যবস্থাপনার মূল চালিকাশক্তি হবে। এ কারণে টেলিটক নিজেদের পরিকল্পনাতেও ফোরজি সম্প্রসারণ, উন্নতকরণ এবং ফাইভজির বিস্তৃতি একইসঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তাই বাস্তব অবস্থার বিচারেই এ সময়ে থ্রিজির জন্য নতুন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হবে না।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ফাইভজি ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরির জন্যই টেলিটক সবার আগে ফাইভজির প্রাথমিক ও বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম প্রকল্প নিয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় অপারেটর হিসেবে টেলিটক সবসময়ই ব্যবসায়িক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সুলভ মূল্যে গ্রাহক সেবা এবং প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে দুর্গম হাওর-বাওর, সুন্দরবনের গহীন জঙ্গল এবং দূর সীমানার পাহাড়ি অঞ্চলের বেশীরভাগ অংশেই শুধু টেলিটকের নেটওয়ার্ক রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, টেলিটকের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। যা অবাস্তব এবং ভিত্তিহীন। তিনি ব্যাখা দিয়ে বলেন, প্রথমত, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ব বাস্তবতায় বিশ্বজুড়েই সরাসরি ভয়েস কলের জন্য আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন ক্রমাগত কমছে। কারণ মানুষ এখন ওটিটি অ্যাপ যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জার বা এ জাতীয অ্যাপ ব্যবহার করছে। ফলে ভিওআইপি প্রযুক্তির অবৈধ ব্যবহারও এখন পুরোনো ইতিহাসে পরিণত হচ্ছে। এ বাস্তবতা না বুঝে অভিযোগ তোলা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, টেলিটক একটি অপারেটর হিসেবে গ্রাহকের কাছে সিমকার্ড বা সংযোগ বিক্রি করে। গ্রাহক কীভাবে এর ব্যবহার করছে, তার দায় গ্রাহকের। এছাড়া তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে টেলিটকের সিমকার্ডে কোথাও অবৈধ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেলে সেই সিমকার্ড কোন গ্রাহকের, তার তথ্য সংশ্নিষ্ট সংস্থার কাছে দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি টেলিটকের কোনো ডিলার যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে সিমকার্ড বিক্রি করেছেন কি-না, এমন প্রমাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।