নিউজ ডেস্ক:
বুড়িগঙ্গাকে দৃষ্টিনন্দন করতে মাস্টারপ্ল্যান নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পরিকল্পনার আওতায় ইংল্যান্ডের টেমস নদীর আদলে সাজানোর পরিকল্পনা আছে বুড়িগঙ্গাকে। অপরদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি) নদীটির পুরনো চ্যানেল নিয়ে পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নদীর আদি চ্যানেল উদ্ধার করে সেখানে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে।
২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর কামরাঙ্গীরচরে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় আদি বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বুড়িগঙ্গার নান্দনিকতা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি।
গত ২২ জুন বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের দখলমুক্ত জায়গায় ৫০ মিটার পরপর সীমানা পিলার স্থাপন করে দক্ষিণ সিটি। এর মাধ্যমে ৪৫০ মিটার সীমানা পিলার স্থাপন করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) আদি বুড়িগঙ্গাকে পুনরুদ্ধার করতে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি একটি প্রকল্প গ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নানা কারণে বুড়িগঙ্গা তার গৌরব হারিয়েছে। এ নদী মৃতপ্রায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নদীর প্রাণ ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছি। হাতিরঝিলের আদলে পরিকল্পনা রয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে নদীর চেহারাই বদলে যাবে। ফিরে আসবে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ।’
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার করবো, নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করবো। এ জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখল থেকেও নদীকে মুক্ত করবো।’
অপরদিকে ঢাকার চারপাশের তুরাগ, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরে ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২২৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।
২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ চালু করে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সহজ করারও পরিকল্পনা নেওয়া হবে। পাশাপাশি নদীর পানির প্রকৃত রঙ ফেরাতেও কাজ চলবে। নদীর তীরে থাকবে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার রাস্তা, পার্ক, বসার স্থান, নদীঘাট, প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ। ফুল ও ফলগাছে সাজানো হবে নদীর পাড়। থাকবে উন্নত বাস সার্ভিসও।
বুড়িগঙ্গার দুই তীর ঘেঁষে থাকবে উন্নতমানের পাথরের তৈরি ওয়াকওয়ে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য থাকবে বেঞ্চ। থাকবে বিনোদন পার্ক। তিন তারকা মানের কয়েকটি রিসোর্টের চিন্তাও করা হচ্ছে। উন্নত দেশের নদীবন্দরের আদলে সাজানো হবে সদরঘাটকেও।
বর্তমানে অর্ধশতাধিক স্লুইসগেটসহ বিভিন্ন স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে দুই কোটি নগরবাসীর বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পড়ে। যে কারণে এই নদীর পানি দূষিত ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। এটা দূর করতে কয়েকটি স্থানে পানি শোধনাগার স্থাপন করা হবে। ময়লা পানি বুড়িগঙ্গায় পৌঁছার আগেই কয়েকটি পুকুরে যাবে। সেখান থেকে পানি ফিল্টার হয়ে বুড়িগঙ্গায় যাবে।