নিউজ ডেস্ক:
বঙ্গোপসাগরের অগভীর অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪ নম্বর ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি অনুসন্ধান কাজ শুরু করছে। ২০২২ সালের শুরুতে আরো ৩টি ব্লক ইজারা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে পেট্রোবাংলা। আগামী জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। এদিকে ৪ নম্বর ব্লকে ভারতীয় কোম্পানির খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয়। তখন অগভীর সমুদ্রের ৯ নম্বর ব্লকে কেয়ার্নস এনার্জি একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। ১৯৯৮ সালে ওই ব্লকে গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। কিন্তু ওই গ্যাসক্ষেত্রের মজুত খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। এ কারণে ২০১৩ সালে এই গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর নানা কারণে বঙ্গোপসাগরের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা সফল হয়নি। আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলে বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আবারো সমুদ্রসীমায় খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে জোরালো উদ্যোগ নেয়া হয়। বিগত এক দশকে সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এখন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
নতুন করে সমুদ্রের তিনটি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই দরপত্র আহ্বান করার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর বঙ্গোপসাগরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীরে ১১টি ব্লক রয়েছে। এছাড়া আগে থেকেই স্থলভাগে ২২টি
ব্লকে ভাগ রয়েছে। এখন অগভীর সমুদ্রের ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লক তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। এই ৩টি ব্লকে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্যাস পাওয়া গেলে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। এতদিন করোনার কারণে বিদেশি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানিগুলোর কোনো আগ্রহ ছিল না। করোনার ধকল কাটিয়ে সবাই আবার কাজে ফিরছে। আগামী বছরে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে। সেক্ষেত্রে দরপত্রে ভালো সাড়া পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী জ¦ালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় এখন বিদেশি কোম্পানিগুলো অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
জ¦ালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান জানান, নতুন করে সমুদের ৩টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে নতুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ২ মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া গেলে দেশীয় উৎপাদন বাড়বে এবং এলএনজির ওপর নির্ভরতা কমবে।
এদিকে বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালী উপকূলে বঙ্গোপসাগরের এসএস-৪ ব্লকে পেট্রোবাংলার সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির ভিত্তিতে ভারতের ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড ও অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কনসোর্টিয়াম এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) যৌথভাবে অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে পেট্রোবাংলার সঙ্গে ওএনজিসি এবং অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কনসোর্টিয়ামের উৎপাদন অংশীদার চুক্তি (পিএসসি) হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অগভীর সমুদ্রের ৪ হাজার ২০০ মিটার বা ১৩ হাজার ৭৮০ ফুট মাটির গভীরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে। কূপ খননের পর এখান থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তেল বা গ্যাস থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই কূপ খননে বাপেক্সের কোনো খরচ নেই। সব খরচ ভারতীয় কোম্পানি বহন করবে।
পিএসসি চুক্তি অনুযায়ী, অংশীদার হলেও বাপেক্সের প্রাথমিক কোনো খরচ নেই। যদি গ্যাস পাওয়া যায় তখন বাপেক্স তার অংশের খরচের টাকা দেবে, গ্যাস না পেলে খরচ নেই। ভারতীয় কোম্পানি নিজস্ব খরচে জরিপ এবং খনন করবে। গ্যাস ব্লকের ৯০ ভাগের ভারতীয় দুই কোম্পানি এবং ১০ ভাগের অংশীদার বাপেক্স। ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারের সূত্রে বাপেক্স এই প্রথম সমুদ্রের গ্যাস ব্লকের অংশীদার হলো।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, গ্যাস অনুসন্ধানে ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে বাপেক্স এখন অংশীদার। দ্বিমাত্রিক জরিপ থেকে শুরু করে সব কাজ বাপেক্স তদারকি করছে। এটা বাপেক্সের নতুন অভিজ্ঞতা। বাপেক্সের প্রকৌশলীরাও দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন।