নিউজ ডেস্ক;
কোভিড ১৯-এর টিকা দিতে চীন থেকে ৯ কোটি অটো-ডিজাবল (এডি) সিরিঞ্জ কিনছে সরকার। এ ক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানি থেকে সিরিঞ্জ না কেনার পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত এত বিপুলসংখ্যক সিরিঞ্জ অল্প সময়ের মধ্যে সরবরাহের সক্ষমতা দেশীয় কোনো কোম্পানির নেই। দ্বিতীয়ত দেশীয় কোম্পানির দাম চীনের সিরিঞ্জের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
কোভিডের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে দেশের ৮০ শতাংশ (১৩ কোটি ৮২ লাখ) মানুষকে টিকা দিতে হবে। একেকজনকে দুই ডোজ করে দিলে মোট টিকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ কোটি ৬৪ লাখ। এ পরিমাণ টিকা দিতে সমপরিমাণ সিরিঞ্জও দরকার। দেশীয় কোম্পানি- জেএমআইয়ের প্রতিটি সিরিঞ্জের দাম ৬ টাকা ২ পয়সা। অন্যদিকে চীনা কোম্পানির সিরিঞ্জের দাম পড়বে ৩ টাকা ৪২ পয়সা। অর্থাৎ জেএমআই থেকে ৯ কোটি সিরিঞ্জ কিনতে দাম পড়বে ৫৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর চীন থেকে কিনলে খরচ হবে মাত্র ৩০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
এ জন্য চীন থেকে ৯ কোটি সিরিঞ্জ কেনার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ দিয়েছেন। প্রস্তাবে
তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ইতোমধ্যে এ প্রস্তাব দেখেছেন এবং অনুমোদন করেছেন। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপনের সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
গত ১৭ অক্টোর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। ওই দিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল ফরেন ট্রেড করপোরেশন’ থেকে সরাসরি পদ্ধতিতে (ডিপিএম) সিরিঞ্জগুলো কেনা হবে। চীন ছাড়া অন্য কারও পক্ষে এত বিপুল পরিমাণ সিরিঞ্জ সরবরাহের সক্ষমতা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ডোজ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর সরাসরি পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ১১ কোটি এডি সিরিঞ্জ কেনার অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ প্রকল্পের মাধ্যমে অনুমোদিত সিরিঞ্জ কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রস্তাবিত সরবরাহ সূচি অনুযায়ী, বিদ্যমান উৎস থেকে প্রতি মাসে দেড় কোটি সিরিঞ্জ সরবরাহ করতে পারবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে দুই কোটি সিরিঞ্জ উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেনা সময় সাপেক্ষে, যা চলমান টিকা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এ কারণে ওই সংখ্যক সিরিঞ্জ ডিপিএম পদ্ধতিতে কেনা প্রয়োজন।
সিরিঞ্জের ঘাটতি পূরণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে যোগাযোগকারী ‘চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল ফরেন ট্রেড করপোরেশন’ ও ‘চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন’ উভয়ের প্রস্তাবিত মূল্য একই। এ দুটি কোম্পানির প্রস্তাবিত মূল্য ০.৪ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন টাকা ৪২ পয়সা। তবে ‘চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল ফরেন ট্রেড করপোরেশন’ দুই ধরনের সিরিঞ্জ (দশমিক ৫ মিলি ও ১ মিলি) সরবরাহের সুযোগ রয়েছে। এ কারণে টিকা কার্যক্রমে দশমিক ৫ মিলি ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ কেনা যেতে পারে। চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুরোধে উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিরিঞ্জের একক দাম ও সরবরাহের সক্ষমতা বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সরাসরি ক্রম পদ্ধতি অনুসরণ করে ‘চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল ফরেন ট্রেড করপোরেশন’ থেকে পিপিআর ২০০৬-এর ধারা ৬৮(১) এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮-এর ধারা ৭৬(২)-এর আলোকে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটির নীতিগত অনুমোদন আবশ্যক।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে দেশের অর্থ সাশ্রয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত সময়ে সিরিঞ্জ পেতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’