নিজস্ব প্রতিবেদক, নন্দীগ্রাম:
বগুড়ার নন্দীগ্রামে দিনদিন বেড়েই চলেছে পরিবেশ বিপর্যয়কারী ইউক্যালিপটাস গাছের উৎপাদন ও বিপণন। ইউক্যালিপটাস গাছের কড়ালগ্রাসে কৃষি জমি ও পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কোনোভাবেই ইউক্যালিপটাস গাছের উৎপাদন ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে এর বিস্তার ক্রমেই বাড়ছে রাস্তাঘাট, সড়ক, আবাদি জমি ও বসতবাড়িতে। দ্রুত বেড়ে ওঠার কারণে এ গাছ অল্পদিনেই বিক্রয় করা সম্ভব হয়। এজন্য সাধারণ মানুষ পরিবেশের কথা না ভেবে লোভে পড়ে ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ লাগিয়ে থাকে।
সরকার মানুষ ও পরিবেশের কথা চিন্তাভাবনা করে ২০০৮ সালে ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করে। কিন্তু সঠিক তদারকি না থাকায় কোনোক্রমেই বন্ধ হচ্ছে না এ গাছের উৎপাদান-বিপণন। এ উপজেলার সাধারণ মানুষ বাড়তি আয়ের আশায় আবাদি জমি, বসত বাড়ি, জমির আইল ও পতিত জমিতে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগিয়ে আসছে। এছাড়া রাস্তাঘাট ও সড়কগুলোতেও চোখে পড়ে সারিসারি ইউক্যালিপটাস গাছ। এ গাছ লাগানোর কারণে ফলদ বৃক্ষের চারা সংকট এবং আশপাশের আবাদি জমির ফলন বিপর্যয়সহ জীব বৈচিত্রের ক্ষেত্রে পড়ছে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব। ফলদ বৃক্ষ কমে যাওয়ায় পুষ্টি অভাবের পাশাপাশি বাড়ছে অ্যাজমা, হাপানিসহ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ।
পরিবেশ বিপর্যয়কারী ইউক্যালিপটাস গাছ মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষণ করে নেয়। এ গাছ আশপাশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট এলাকার পানি শোষণ করে আকাশে তুলে দেয়। একটি পূর্ণ বয়স্ক ইউক্যালিপটাস গাছ ২৪ ঘণ্টায় ভূগর্ভ থেকে প্রায় ৯০ লিটার পানি শোষণ করে থাকে। ফলে জলবায়ুর জন্য এ গাছ মারাত্মক ক্ষতিকর। বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অক্সিজেন। ইউক্যালিপটাস গাছও বেশি পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও অধিক পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। সাধারনতো গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আর অক্সিজেন সরবরাহ করে পরিবেশ নির্মল ও প্রাণিকূলের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে থাকে। অথচ ইউক্যালিপটাস গাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে। এর পাতা ও ডাল পালা অজৈব পদার্থের মতো কাজ করে জমিকে অনুর্বর করে থাকে। ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়।
উপজেলার বিজরুল গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার পতিত জমিতে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগাইছি। এ গাছ লাগালে যে ক্ষতি হয় তা আমি আগে জানতাম না। ইউক্যালিপটাস গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয় সেজন্য লাগাই।
দলগাছা গ্রামের কৃষক মুনিরুজ্জামান বলেন, এতো গাছ থাকতে সড়কের দুই পাশে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো হয় কেনো ? এ গাছ লাগানোর পর থেকে জমির ফলন কমে গেছে। সবসময় ধান ক্ষেতে গাছের পাতা পড়ে থাকে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ইউক্যালিপটাস গাছের উৎপাদন ও বিপণনে আমরা মানুষকে নিরুৎসাহিত করে আসছি। আমাদের নার্সারিগুলোতে ইউক্যালিপটাস গাছের উৎপাদন করা হয় না। এ উপজেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও সড়কে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ গাছগুলো অনেক আগেই লাগানো হয়। নতুন করে আমরা এ গাছ লাগানো বন্ধ করে দিয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু বলেন, ফসলি জমির জন্য ইউক্যালিপটাস গাছ খুবই ক্ষতিকর। এ গাছের পাতা পড়ে মাটির স্তর বিষাক্ত করে ফেলে। রাস্তাঘাট, সড়ক ও জমির আইলে ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে কৃষকদের সোনালী ফসল অনেকাংশে কমে যায়। ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে মাটির পুষ্টি-প্রবাহও নষ্ট হয়ে থাকে। যে কারণে ওই স্থানে ঘাস ও লতাপাতা জন্মাতে পারে না। ইউক্যালিপটাস গাছ বিভিন্ন পোকা মাকড় ও পাখিদের জন্যেও যথেষ্ট ক্ষতিকর।
আরও দেখুন
নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম,,,,,,,,,,,,, বগুড়ার নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা …