নিউজ ডেস্ক:
রকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক ও কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকারও। নিরাপত্তা জোরদারে পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ সব মেগা প্রকল্পের এবং ঐ দুই বিমানবন্দরের প্রধানদের নিয়ে ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে পৃথক নিরাপত্তা কমিটি। প্রতিটি প্রকল্প এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিটিগুলোকে।
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ, সংশ্লিষ্ট সকল সচিব ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সমপ্রতি সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পসমূহের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন করেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশে অবস্থানকালে তারা প্রতিটি প্রকল্প এলাকায় ঝটিকা সফরে যান। এসময় তারা মেগা প্রকল্পসমূহ এবং হযরত শাহজালাল ও কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দেন।
সিভিল এভিয়েশেনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকার নিরাপত্তা জোরদারে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিকেও সংযুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে সমপ্রসারিত কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকার নিরাপত্তা জোরদারেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প প্রধানের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে।
সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফোকাসে থাকা পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকবার পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগাসহ নানা কারণে এই প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র রাখতে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপপুর পারমাণবিক চুল্লী উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষ্যেও সেখানে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করে। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে এগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সরকারের এই মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়ালা ভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, আগামী বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে তিনটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু করা হবে। এরপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং ডিসেম্বরে মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই চালু হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল। বিশেষ করে, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা কারণেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন রাখতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাস পর কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকেও পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সরকারের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প। পদ্মায় মূল সেতুর কাজ ৯০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল এই সেতুর ৪২টি পিলারে মোট ৪১টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ। ২০২০ সালের প্রথমদিন ঢাকার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইন ও রেল ট্র্যাক বসানোর কাজের সূচনা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশন হবে এবং মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কথা। দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পাবনার রূপপুরে দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ করতে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে সাত বছর। এক লাখ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র। মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমির ওপর তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করা হবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা বিদ্যুত্ নির্মাণ প্রকল্প ও সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজও চলমান। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এসব প্রকল্পে নিরাপত্তা জোরদারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।