নিউজ ডস্ক:
মানি লন্ডারিং বিষয়ক বড় ও বহুমুখী অপরাধের তদন্ত করে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত যৌথ দল। এই তদন্তকারী দলের কার্যক্রম তদারকির ক্ষমতা পাচ্ছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এ লক্ষ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে একটি নতুন উপধারা যুক্ত করা হবে। এসব অপরাধের তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করতেই মূলত এই সংশোধনী আনা হচ্ছে। এতে বিএফআইইউ-এর তদারকির ক্ষমতা আরও বাড়বে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৯(১) ধারায় বিএফআইইউকে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে একাধিক তদন্তকারী সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ তদন্তকারী দল গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এ দল মানি লন্ডারিং অপরাধগুলোর দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করবে এবং এর ভিত্তিতে মানসম্পন্ন মামলা দায়ের করাই মূল লক্ষ্য।
এই ধারায় বিএফআইইউকে যৌথ তদন্তকারী দল গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হলেও তাদের কার্যক্রম তদারকির ক্ষমতা কোনো সংস্থাকে দেওয়া হয়নি। ফলে যৌথ তদন্তকারী দলের কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হচ্ছে না। এতে মানি লন্ডারিং আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএফআইইউর সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় এবং যেসব অপরাধের ঘটনা তদন্ত করতে একাধিক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা আছে, সেগুলোর তদন্ত করতে যৌথ তদন্তকারী দল গঠন করার বিধান রয়েছে। যৌথ তদন্তকারী দলের সদস্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসায় সমন্বয়ে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণেই আইন সংশোধন করে যৌথ তদন্তকারী দলের তদারকির ক্ষমতা বিএফআইইউকে দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, যৌথ তদন্তকারী দলে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি থাকে বলে অনেকেই নিজস্ব সংস্থার কাজের বাইরে গিয়ে এ দলে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। মানি লন্ডারিং অপরাধগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকে। এগুলোর তদন্তের ক্ষেত্রে একাধিক সংস্থার সহযোগিতার প্রয়োজন হয়।
যেমন: অর্থের লেনদেনের বিষয়গুলো বিএফআইইউ, গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্পন্ন করে পুলিশের একাধিক সংস্থা বা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), ঘুস-দুর্নীতির বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মাদকদ্রব্যের বিষয়গুলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), শুল্ক সংক্রান্ত বিষয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর তদন্ত করে থাকে।
কিন্তু এসব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যথাযথ সময় দিতে না পারায় তদন্তকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় না। এতে একদিকে যেমন মামলা দায়ের বিলম্বিত হয়, তেমনি মামলার নিষ্পত্তিও ঝুলে থাকছে। এ জটিলতা নিরসন করে দ্রুত ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন করা এবং এর অগ্রগতি তদারকি করতে বিএফআইইউকে আইনি ক্ষমতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বও তাদের দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে একটি নতুন উপধারা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় ট্রাস্কফোর্সের সভায়।
এর আলোকে একটি উপধারা তৈরি করা হয়েছে। এটি হচ্ছে, ‘যৌথ তদন্তকারী দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তদন্তকাজ সম্পন্ন করাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিশ্চিত করতে বিএফআইইউ যৌথ তদন্তকারী দলের কার্যক্রম সমন্বয় ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। তদন্তের অগ্রগতি ও পরবর্তী কার্যক্রম অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করবে।’
এ উপধারাটির বিষয়ে ইতোমধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সম্মতির কথা জানানো হয়েছে বিএফআইইউকে। যেহেতু যৌথ তদন্তকারী দলে একাধিক সংস্থার প্রতিনিধি থাকে, সে কারণে ওই উপধারার সঙ্গে অন্য কোনো আইনের সাংঘর্ষিক বিষয় আছে কি না, সেটি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই আইন সংশোধনের জন্য লিখিত প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হবে।
সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং বিষয়ক অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম গতিশীল করা এবং মানসম্মত মামলা দায়ের করার জন্য বিভিন্ন সময় জাতীয় সমন্বয় কমিটি ও ওয়ার্কিং কমিটিসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় মানি লন্ডারিং আইন বাস্তবায়নকারী বিভিন্ন সংস্থাকে তাগাদাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ হচ্ছে না। ফলে মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম ঝুলে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেটিই তারা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। সমন্বয়ের অভাব থাকলে সেখানে সমন্বয় করা যেতে পারে। তবে টাকা পাচারের ঘটনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করা উচিত।
একই সঙ্গে সেগুলো ফিরিয়ে এনে পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। কেননা বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে যে আইনি কাঠামো বিদ্যমান, এর আওতায় অনেক দেশ থেকেই টাকা ফেরত আনা সম্ভব। যদিও বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। একবার কারও পাচারের অর্থ ফিরিয়ে আনা হলে এবং পাচারকারীকে শাস্তির আওতায় আনলে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইটি সংশোধন হলে বিএফআইইউ মানি লন্ডারিং বিষয়ক অপরাধ অনুসন্ধানে গঠিত যৌথ তদন্তকারী দলের কার্যক্রম তদারকি করতে পারবে। একই সঙ্গে তদন্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে তদন্তকারী দলের কর্মকর্তাদের আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবে। এতে তদন্তকাজে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের অভাব ঘুচবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তদন্তকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তিও দ্রুত সম্পন্ন হবে।