নিউজ ডেস্ক:
নতুন কারিকুলামের ভিত্তিতে প্রণীত পাঠ্যবই আগামী ২০২২ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের ১০০টি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) পড়ানো হবে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সবার আগে পাবে নতুন কারিকুলামের বই। স্কুলের ধরন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে বই ও পরীক্ষা পদ্ধতি বদলে যাবে। শিখন কৌশলেও নানা পরিবর্তন আসবে। এখন যেভাবে মুখস্থ বিদ্যা চলছে, নতুন শিক্ষাক্রমে সেটি একেবারেই অনুপস্থিত থাকবে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে শিক্ষাক্রম। তিনি বলেন, ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে নতুন কারিকুলাম। ওই বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন বই। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম; ২০২৬ সালে একাদশে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে হবে নতুন বই।
মশিউজ্জামান আরও জানান, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে নির্বাচিত ১০০টি স্কুলে পাইলটিং হিসেবে
নতুন পাঠ্যক্রমের বই পড়ানো হবে। এসব স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে নতুন পাঠ্যক্রমের বই। স্কুল নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে স্কুল নির্ধারণ করা হবে। যেমন- সাধারণ স্কুল, হাওর অঞ্চলের স্কুল, উপকূলীয় এলাকার স্কুল, শহরের স্কুল, গ্রামের স্কুল, গার্লস স্কুল, বয়েজ স্কুল, কো-এডুকেশন স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি স্কুল, সরকারি স্কুল, বেসরকারি স্কুল- এভাবে বিভিন্ন ধরনের স্কুল নির্বাচন করা হবে। এই কারিকুলাম সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য করা হয়েছে। এটি চালু হলে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তা চিহ্নিত করা হবে পাইলটিংয়ের সময়। পাইলটিংয়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশদ পরিসরে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডাটা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে স্কুল নির্বাচন করা হবে। এ বিষয়ে আমরা একটি বৈঠক করেছি। কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে। আশা করি শিগগির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের কাজ শেষ করতে পারব।
পরীক্ষা হবে ৪০ নম্বরে
বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিকবিজ্ঞান বিষয়ে ৪০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর গতানুগতিক পরীক্ষার বদলে শিখনকালীন মূল্যায়নের মাধ্যমে থাকবে ৬০ নম্বর। এ ছাড়া, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরো ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন।
শিক্ষার্থীদের পড়তে হবে ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পাঠ্যবই প্রণয়ন হবে ১০টি। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিকবিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
সদ্য প্রণীত এই কারিকুলামে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। যেমন- নবম ও দশম শ্রেণিতে মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা নামে বিভাগ থাকবে না। সমন্বিত পাঠ্যক্রম থাকবে এই পর্যায়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি বিষয় ঠিক করা হয়েছে, সবাই সেগুলো পড়বে। শুধু দশম শ্রেণিতে যা পড়ানো হবে, তার ওপরে ভিত্তি করে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে। বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য নামে বিভাজন হবে উচ্চ মাধ্যমিকে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠসূচির ওপর প্রতি শিক্ষাবর্ষ শেষে একটি করে পাবলিক পরীক্ষা হবে। এ দুটো পরীক্ষার সমন্বয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত ফল নির্ধারিত হবে।