নিউজ ডেস্ক:
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে মোট এক লাখ ৯৮ হাজার ২০৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে বিতরণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বিতরণের পাশাপাশি আদায় পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, গত বছর করোনা শুরুর পর নানা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। গত বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে পর্যন্ত লকডাউনের কারণে ঋণ বিতরণ এক ধরনের বন্ধ ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যেও চরম খারাপ অবস্থা তৈরি হয়। সে তুলনায় চলতি বছর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যদিও সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণের তেমন উন্নতি হয়নি। গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে শিল্পঋণ আদায় হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ১৭ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে আদায় বেড়েছে ২৪ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। ঋণ আদায় বাড়লেও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে ৯৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকায় ঠেকেছে। গত বছরের জুনে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। আর বকেয়া ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ১৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে মেয়াদি ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে বড় শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৬ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, যা ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। তবে মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণ ১২ দশমিক ২২ শতাংশ কমে এক হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় নেমেছে। আর ক্ষুদ্র শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণ ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ কমে এক হাজার ৬৪৯ কোটি টাকায় নেমেছে।
প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় এপ্রিল-জুন সময়ে চলতি মূলধন ঋণ ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৮৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বৃহৎ শিল্প ছাড়া মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণ বিতরণ কমেছে। মাঝারি শিল্পে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ কমে সাত হাজার ৭৯৬ কোটি টাকায় নেমেছে। ক্ষুদ্র শিল্পে শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় নেমেছে। তবে বড় শিল্পে ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে ৭৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা হয়েছে।
ছয় মাস বিবেচনায় আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে আদায় ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ কমে ৮২ হাজার ২২১ কোটি টাকায় নেমেছে। প্রথম তিন মাসে যেখানে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সমস্যায় পড়াদের ঋণ পরিশোধে শিথিলতার প্রয়োজন আছে। তবে ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি হবে না ঢালাওভাবে এমন সুবিধার কারণে সামর্থ্য থাকার পরও অনেকে ঋণ পরিশোধ করছেন না। এমনটি না হলে আদায় পরিস্থিতির হয়তো আরও উন্নতি হতো। অবশ্য ব্যাংকগুলোর আপত্তির পরও চলতি বছর ব্যাংকের একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, তার ২৫ শতাংশ দিলে তাকে আর খেলাপি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপিমুক্ত রাখা যাবে। এর আগে গত বছর কেউ এক টাকা না দিলেও তাকে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি এ রকম শিথিলতার ফলে ঋণ পরিশোধ না করার নতুন একটি পক্ষ তৈরি হচ্ছে বলে তারা মনে করেন।